Logo
Logo
×

জাতীয়

শিক্ষায় দুর্নীতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না

Icon

সংসদ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম

শিক্ষায় দুর্নীতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না

শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্য লেগেই আছে। শিক্ষায় দুর্নীতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। টেবিলে টেবিলে এমপিওভুক্তির জন্য টাকা দিতে হয়। 

অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সংসদ সদস্যদের অন্য অভিযোগের জবাব দিলেও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলেননি।

জাতীয় সংসদে রোববার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ দাবি করেন। 

ছয়জন সংসদ সদস্য ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বক্তব্য রাখেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু অনুপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে, ভবন হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মানের পরিবর্তন হয়নি। আমার নির্বাচনি এলাকায় একটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৪৩টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, তবে পাঁচটি কক্ষ ব্যবহার হয়। এই যে অপব্যয়!আমার পাকা বাড়ি, পাকা পায়খানা কিন্তু খাবার নেই। এটা হচ্ছে আজকের শিক্ষার অবস্থা।

তিনি আরও বলেন, এমপিওভুক্ত হয় না। আবেদন গ্রহণও বন্ধ। এক বছর আগে যাদের এমপিওভুক্তির চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের পিয়ন চাপরাশির দু-একজনের বেতন হয়েছে, অন্যদের বেতন হয় না। একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার ২০ থেকে ২৫ বছর পরে বেতন হচ্ছে। গ্রামের স্কুল মাদ্রাসায় চারতলা ভবন করা হয়েছে। যারা এই পরিকল্পনা করেছেন, তারা বাংলাদেশে বাস করেন না। তারা গ্রাম দেখেননি।

বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রশংসনীয়। তবে কুড়িগ্রামের চিলমারীর কেউ যদি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে নিয়োগ পায়, তাহলে সে যোগদান করে না। পার্বত্য এলাকায় তো আরও সমস্যা। এ কারণে শিক্ষক নিয়োগের পরেও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই নিয়োগ অঞ্চলভিত্তিক করার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসারদের শূন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট সংসদ সদস্যদের সভাপতি হতে নিষেধ করলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন আপিল করবেন। আসলে এমপিদের সবাই অপমান করে। জানি না হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আদৌ আপিল করেছেন কিনা? 

কুড়িগ্রাম-২ আসনের হামিদুল হক খন্দকার বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ সব সময় জিডিপির লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে থাকে। শিক্ষাব্যবস্থায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্য লেগেই আছে। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক, শিক্ষাক্রম ও আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা একই কর্মস্থলে পাঁচ-সাত বছর ধরে থেকে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে। নতুন কারিকুলাম নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে।

নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম বলেন, রেলের খালাসি পদে দুই হাজার ১০০ জন ছেলে-মেয়ের চাকরি হয়েছে, যাদের সবাই মাস্টার্স পাস। এটা খুবই কষ্টের বিষয়। আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু আগামী অর্থবছরে কমপক্ষে পাঁচ লাখ অনার্স-মাস্টার্স পাশ ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে কোনো শিক্ষিত বেকার না থাকে। 

তিনি বলেন, সবক্ষেত্রেই দুর্নীতি। শিক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। টাকা ছাড়া কোনো শিক্ষক অবসর ভাতা পাচ্ছেন না। আমার শ্যালক শিক্ষক ছিলেন, মারা গেছেন। আমি নিজে তিন বছর তদবির করলেও অবসর ভাতা পাননি। 

ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী প্রশাসনিক ব্যয় কমিয়ে শিক্ষা গবেষণায় ব্যয় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করেন।

সংসদ সদস্যদের এসব বক্তব্যের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দূরবর্তী জায়গায় অনেকে যোগদান করে না, এটা ঠিক। তার পরও বিগত ছয় মাসে ৯৯ হাজার শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এটি একটি সমস্যা, আমরা ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছি। এই যে একটি বাধা আছে, আমরা আইন সংশোধনের মাধ্যমে তা নিরসনের চেষ্টা করছি। 

সংসদ সদস্যদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যেসব কলেজ হয়েছে, সেখানে এমপিদের গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত থেকে একটি রায় এসেছিল। যার কারণে সংসদ সদস্যদের সভাপতি করা হচ্ছে না। আমরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলেছি। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এটা আদালত থেকে নিষ্পত্তি করা হবে। আমরা এ বিষয়ে লিভ আবেদন করেছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম