Logo
Logo
×

জাতীয়

শরিফার গল্প বাদ দিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের নিন্দা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৮:২৫ পিএম

শরিফার গল্প বাদ দিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের নিন্দা

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৩৯ পৃষ্ঠায় ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ নামক অধ্যায়ে থাকা শরিফার গল্পটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ও গল্পটি বাদ দেওয়ার জন্য এনসিটিবিকে নির্দেশ দিয়েছে বলে জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

মন্ত্রণালয়ের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। 

চলতি বছর থেকেই ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষাগ্রহণ শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক ও বহুত্ববাদের সোনার বাংলার আদর্শকে সামনে রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে নতুন এই শিক্ষাক্রম। ফলে শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক ও একাত্তরের পরাজিত অপশক্তিরা এ শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করে আসছে। 

সমাজে হিজড়া ও রূপান্তরকামী মানুষের উপস্থিতির বাস্তবতা, সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে বর্তমান সরকার যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন, নতুন এ শিক্ষাক্রম তারই একটি অংশ। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলেই ২০১৩ সালের নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা প্রণীত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের স্বীকৃতি এবং ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। 

এমনকি বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রকল্পও আছে এই হিজড়া ও রূপান্তরকামী সম্প্রদায় নিয়ে। সমাজের নানাক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, বহুত্ববাদের ধারণা ছড়িয়ে দিতে বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রমের রূপরেখা প্রণয়ন করে সরকার। 

এ শিক্ষাক্রম বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কেননা এর মাধ্যমেই আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক ও আগামী দিনের স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলা যাবে। 

কিন্তু এই শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে কূপমণ্ডুক মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। তারা নানাভাবে এ শিক্ষাক্রম সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য ও নানা ধরনের গুজব-অপপ্রচার ছড়াতে থাকে অনলাইনে ও অফলাইনে। 

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের শরিফার গল্পটি নিয়ে সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি-মানসিকতাসম্পন্ন এক শিক্ষক অযৌক্তিক নেতিবাচক বক্তব্য প্রচার করে, যা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। 

মুক্তচিন্তার মানুষ তার প্রতিবাদ করেছিল এবং সেই শিক্ষককে চাকুরিচ্যুতও করা হয়েছিল। তখন সরকারের সিদ্ধান্ত আমাদের স্তম্ভিত করেছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৫ জানুয়ারি গল্পটি পর্যালোচনার জন্য ৫ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’ করেছিল। যেখানে না ছিলেন কোনো চিকিৎসক-মনোবিজ্ঞানী-সমাজবিজ্ঞানী, না ছিলেন যাদের নিয়ে গল্প, তাদের কোনো প্রতিনিধি। 

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল এবং এর প্রতিবাদও করেছিল।

বহুত্ববাদের তত্ত্বের ভিত্তিতে যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হলো, প্রথম পর্যায়েই এ ধরনের কমিটির সুপারিশে সেই কার্যক্রম একটি বড়ো ধাক্কা খেলো বলে মনে করছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। 

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে এই কমিটি গল্পের ১৯টি শব্দ ‘ইসলাম ধর্ম’ ও ‘বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার’ সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছে। এমন সুপারিশ বাংলাদেশের মৌল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গল্পটিকে বাদ দেওয়ার যে নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তা প্রমাণ করে মৌলবাদ আর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার যে জিরো টলারেন্স নীতিতে এগিয়ে চলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। 

এ কারণেই এ ধরনের নতজানু সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করেছে, যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লড়াকু মানুষদের সংগ্রাম ও ইতিহাসকে অশ্রদ্ধারই শামিল। তাই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মনে করে, অবিলম্বে এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন শিক্ষাক্রমের যাত্রাকে আরও সুসংহত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হোক। 

কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে আপস করে অতীতেও বাংলাদেশ সামনের দিকে এগোতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। বাংলাদেশের ইতিহাস এই ধর্মান্ধ, মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস। তাদের পরাজিত করে শুভশক্তির মশাল জ্বেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। 

অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নতজানু সিদ্ধান্ত বাতিল ও সর্বস্তরে যুগোপযোগী এই শিক্ষাক্রম পুরোদ্যমে চালুর দাবি জানাচ্ছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম