Logo
Logo
×

জাতীয়

ঢাকাই বাংলাদেশ নয়, দৃষ্টি দিতে হবে পুরো দেশে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ১১:৫১ পিএম

ঢাকাই বাংলাদেশ নয়, দৃষ্টি দিতে হবে পুরো দেশে

বিআইআইএসএস আয়োজিত সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা

আমরা শুধু ঢাকার উন্নয়ন করছি; ঢাকা মানে বাংলাদেশ নয়, এজন্য পুরো দেশের উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিতে। সরকারের প্রতি এমন আহবান জানিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা। 

রাজধানীতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত সেমিনারে তারা এ আহ্বান জানান।
 
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের শহরগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে। আগে শহর গড়ে তোলা হচ্ছে পরে নাগরিক সেবার কার্যক্রম করা হচ্ছে। এটা উলটো কাজ; পরিকল্পনার চর্চা যেসব দেশে আছে সেখানে এসব চিন্তাও করা হয় না, আর নগরায়ন বলতে বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা মুখ্য হয়ে উঠেছে। বিকেন্দ্রীকরণের কোনো ভাবনা নেই কারও মাঝে। এজন্য শহরগুলো অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

তারা বলেন, সামনের দিন বাংলাদেশে নগরায়ন বাড়বে। এক্ষেত্রে পরিবেশ অক্ষুণœœ রেখে উন্নয়ন করতে হবে। এ নিয়ম শুধু ঢাকা নয়, গ্রাম পর্যায়েও নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। পরিকল্পনা করে তার আলোকে উন্নয়ন করতে হবে। তাহলে টেকসই ও বাসযোগ্য নগরায়ন গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
  
টেকসই নগরায়ন: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক নগর বিশেষজ্ঞ ড. সেগুফতা হোসেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ধারণা করা হচ্ছেÑ ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের নগর অঞ্চলে বসবাস করবে ৫৬ শতাংশ মানুষ; বর্তমানে বসবাস করছে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। ১৯৭৫ থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৪ শতাংশ। আরও বলা হচ্ছে, ২০৩০ সালে দেশের নগর অঞ্চলে বসবাস করবে ৮৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ এবং ২০৫০ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১০০ মিলিয়নে। 

মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলো নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। চট্টগ্রাম শহরে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে এবং পাহাড় কেটে নগরায়ন করা হচ্ছে। রাজশাহী মহানগর অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে অবকাঠামোগুলো শহরের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। খুলনায় শহরাঞ্চলের অপরিকল্পিত, এলোমেলো এবং অস্থিতিশীল বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। সিলেট মহানগরে পরিবেশ দূষণ, অদক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিশুদ্ধ পানির অভাব, ট্রাফিক সমস্যা প্রকট এবং বন্যা, শব্দ ও বায়ুদূষণ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

বরিশাল শহর বিপুল পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত কঠিন বর্জ্য থেকে পরিবেশ দূষণ করছে। রংপুর শহরে ভূমিকম্প ও আগুনের ঝুঁকি প্রবল আকার ধারণ করেছে। ময়মনসিংহ শহরটি অপরিশোধিত শিল্প ও নগর বর্জ্যে মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে। আর রাজধানী ঢাকা শহর বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। শান্তিপূর্ণ ছোট জনবসতি এলাকা থেকে মেগাসিটিতে রূপান্তির হওয়া ঢাকায় অপরিকল্পিত ও বিশৃঙ্খলভাবে নগরায়ন ঘটছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
 
ড. সেগুফতা হোসেন তার প্রবন্ধে তুলে ধরেনÑ একটি টেকসই শহরের জন্য প্রয়োজন পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা, অবকাঠামো ও সেবা কার্যক্রমগুলো যথানিয়মে করা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান এবং বৈষম্য ও বঞ্চনামুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। এছাড়া নগর দুর্যোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা গড়ে তোলা অর্থাৎ অগ্নিকাণ্ড, নগর বন্যা ও ভূমিকম্পের বিষয়গুলো মাথায় রেখে নগরের উন্নয়ন কার্যক্রম করতে হবে।
 
আরও জানান, ১৯৫৫ সালে দেশের নগর অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৯৬০ সালে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, ১৯৬৫ সালে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ১৯৭০ সালে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ১৯৭৫ সালে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, ১৯৮০ সালে ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ, ১৯৮৫ সালে ১৭ শতাংশ, ১৯৯০ সালে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, ১৯৯৫ সালে ২১ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০০০ সালে ২৪ শতাংশ, ২০০৫ সালে ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০১০ সালে ৩১ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৩৫ শতাংশ, ২০২০ সালে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া ২০৫০ সালে দেশের নগর অঞ্চলের জনসংখ্যা বেড়ে ৫৬ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের নগর অঞ্চলে এখন মোট জনসংখ্যার ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ বসবাস করছে। দেশের বিদ্যমান শহরগুলো নানারকম সমস্যায় জর্জরিত। এটা ম্যানেজ করা খুবই কঠিন ব্যাপার। টেকসই নগর গড়ে তুলতে হলে নগর ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সঙ্গে করতে হবে।
 
তিনি বলেন, ২০১১ সালে জাতীয় নগর নীতির খসড়া করা হয়। এক যুগের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও তা পাশ হয়নি। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।
 
বিশ্বব্যাংকের নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ঈশিতা আলম অবনী বলেন, ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকার মতো বা তার চেয়ে বেশি জনসংখ্যার শহরেও ঢাকার চেয়ে যানবাহনের গতিবেগ বেশি। এছাড়া ঢাকার আবাসন সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর পরও ঢাকা শহর জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের তৃতীয় অবস্থা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে ঢাকাকে কার্যকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, ঢাকা মানেই বাংলাদেশ নয়। ঢাকার বাইরেও দেশের বড় অংশ রয়েছে। আমরা যারা ঢাকায় রয়েছি, তারা বুঝতে চেষ্টা করি না। আর যারা গ্রামে আছে তারাও বুঝতে চেষ্টা করে না; তারা শহরে চলে আসতে চায়। তারা মনে করে, শহরে এলে জীবনে চরম উন্নতি লাভ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, নগরায়নের নামে সরকারি ও বেসরকারি উপায়ে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। নদ-নদী নষ্ট করা হচ্ছে, পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। খোদ রাজধানীর ৯৫ শতাংশ ভবনের অনুমোদন ত্রুটি রয়েছে। দেশের গ্রাম ও শহরগুলোকে ঠিক রাখতে হলে পরিবেশবান্ধব উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এজন্য সৎ হওয়ার দরকার নেই, প্রয়োজন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন। বিল্ডিং কোড, পরিবেশ আইন, জলাধার সংরক্ষণ আইন এবং অন্যান্য আইন মেনে চললে বাসযোগ্য দেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এজন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। 

বিআইআইএসএসে’র চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকার সেমিনার সঞ্চালনা ও সমাপনী বক্তৃতা করেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তৃতা করেনÑবিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান। 

আলোচনায় অংশ নেনÑ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. খন্দকার শাব্বির আহমেদ। এছাড়া সেমিনারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং তাদের মন্তব্য, পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম