‘মুজিব ও স্বাধীনতা’ প্রদর্শনী
একটি জীবনের গল্প ও রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৪০ এএম
শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়- একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস-অনুভূতি। যিনি শোষিত, নিপীড়িত বাংলার মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন, দিয়েছেন স্বাধীনতার স্বাদ। পৃথিবীর মানচিত্রে যিনি এঁকে দিয়েছেন লাল-সবুজের নিশান। একজন মানুষের জীবনের গল্প যেন একটি জাতি-রাষ্ট্র সৃষ্টিরই ইতিহাস। বাবা-মায়ের খোকা, ভাইবোনদের মিয়াভাই, রাজনৈতিক জীবনে বন্ধু, নেতা, কর্মীদের কাছে পরিচিতি পান মুজিব ভাই হিসাবে। সেই খোকা, মিয়াভাই আর মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু একসময় হয়ে ওঠেন একটি জাতির পিতা।
‘মুজিব ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে এভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর অনবদ্য জীবন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসে জাতীয় সংসদ ভবনে দ্বিতীয় তলায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রথম কক্ষে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোর, খোকা থেকে শুরু হয়ে তারুণ্যে মুজিব ভাই হয়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় জীবনের নানা তথ্য ও চিত্র রাখা হয়েছে প্রদর্শনীতে। ভারত ভাগ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, উত্তাল ভাষা আন্দোলন ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০-এর নির্বাচন পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ প্রদর্শিত হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে এক অগ্নি পুরুষের উত্থান। বঙ্গবন্ধুর জেল জীবন সম্পর্কে জানাতে সেখানে তৈরি করা হয়েছে জেলের আদলে ছোট্ট একটি কক্ষ।
সত্তরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিজয়ের প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে দ্বিতীয় কক্ষের ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে গেছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের দিকে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অকাতর সংগ্রাম এবং মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের আÍত্যাগের ধারাবর্ণনা স্থান পেয়েছে এ কক্ষে। মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা নয় মাসের ঘটনা প্রবাহ স্মার্ট সেন্সরে পরিচালিত স্কিনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
তৃতীয় কক্ষে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের সঙ্গে আরও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের পরিচিতি সুসংহত করার ইতিহাস। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের সংগ্রামী জীবন ও বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবনের কিছু খণ্ডচিত্রও প্রদর্শিত হয়েছে। এরপর বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্থান পেয়েছে।
আয়োজকরা জানান, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর নির্দেশনায় এ প্রদর্শনীর পরিকল্পনা, ভাবনা ও বাস্তবায়ন করেছে স্পেলবাউন্ড কমিউনিকেশন্স লিমিটেড।চিফ আর্কিটেক্ট ছিলেন সংগীতা ফেরদৌস। এ প্রদর্শনীর সব কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে ১১ মাস। এতে যে শিল্পীরা কাজ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- জিহান করিম, মাসুক হেলাল, অনিক ভৌমিক প্রমুখ। প্রজেক্ট লিড দিয়েছেন স্পেলবাউন্ড কমিউনিকেশন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ সাদেকুল আরেফীন রুম্মান। প্রজেক্ট ডিরেক্টর স্থপতি নন্দনাংশু পুরকায়স্থ ধ্রুব।