Logo
Logo
×

জাতীয়

সানেমের পর্যবেক্ষণ

বাজেটে গুরুত্ব পায়নি বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১০:৩০ পিএম

বাজেটে গুরুত্ব পায়নি বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত

ছবি : সংগৃহীত

প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্ব পায়নি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। বরং কমেছে বরাদ্দ। শুধু তাই নয়, কয়েক অর্থবছর ধরেই এ খাতে বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে কমছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। 

মঙ্গলবার সংস্থাটি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার ৫৩তম জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করেছেন, যেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত মোট বাজেটের মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই খাতের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, সে তুলনায় আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বরাদ্দে উল্লেখযোগ্যভাবে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস হয়েছে। সানেম বাজেট বরাদ্দের সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো বিশ্লেষণ করেছে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করছে সানেম।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিগত বছরগুলোয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বাজেট বরাদ্দে উল্লেখযোগ্য ওঠানামা দেখা গেছে, যার মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ। পরবর্তী দুই অর্থবছরে (২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১) এই খাতে বরাদ্দ যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯১ এবং ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে শুরু করে বরাদ্দের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে; কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে নয়। 

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাজেটের মাত্র ৪ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশে; এ চিত্র দেশের জ্বালানি খাতের প্রতি ধারাবাহিক গুরুত্বহীনতার ইঙ্গিত দেয়।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চারবার বিদ্যুতের ট্যারিফ হার বৃদ্ধি করেছে, যথাক্রমে ৫, ৫, ৫ শতাংশ এবং ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের সূচনা করা হয়েছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য। কিন্তু মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রদানে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। 

বিপিডিবির একটি হিসাবে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে এক টাকা অবমূল্যায়ন ভর্তুকি প্রদানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে ৪৭৩ দশমিক ৬ কোটি টাকা। 

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে (১০৭ দশমিক ৭ প্রতি ডলার থেকে ১১৭ প্রতি ডলার) এ বছরের ভর্তুকির বোঝা বেড়ে হতে পারে ৪৪০৪ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। এ খাতে সরাসরি কর-ব্যয়ের (কর মওকুফ) শতাংশ ইতিবাচক হলেও প্রকৃত পরিমাণ গত বছরের ১১,৯৪২.১৪৭ কোটি টাকা থেকে কমে ৭,৬১১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা এ খাতের জন্য কর-সুবিধার পরিমাণ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।

বিভিন্ন সরকারি পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা থাকা সত্ত্বেও প্রস্তাবিত বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও ব্যবহার বাড়ানোর জন্য মাত্র ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া স্রেডা গত বছরের তুলনায় কম বরাদ্দ (১১ দশমিক ১৯ কোটি) পেয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৪ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা। যদিও এ বরাদ্দ গত বছরের সংশোধিত বাজেটে মাত্র ৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল, যা স্রেডার কার্যকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে।

বিজ্ঞপ্তিতে সানেম বলেছে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আরও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ৯১৪৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। নতুন এলএনজি অবকাঠামো নির্মাণও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অস্থিতিশীল থাকে, যা ইতোমধ্যে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। যেহেতু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসচালিত, জ্বালানির অপর্যাপ্ত মজুতের যে বিদ্যমান অবস্থা, তাতে বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীল এবং বিকল্প জ্বালানি উৎসের বন্দোবস্ত অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৮টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা করেছে বাপেক্স। তবে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ বছরে বাপেক্স ৪৯টি কূপের কূপ খনন করেছে, যার সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। 

বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং চুক্তি (পিএসসি) ২০২৩ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা ৯টি অগভীর এবং ১৫টি গভীর সমুদ্র ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে নিযুক্ত করার জন্য ‘বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড-২০২৪’ শুরু করেছে। এগুলো আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ হলেও এতে বেশ অনিশ্চয়তা, কালবিলম্ব এবং খরচের বাহুল্য রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের জ্বালানি উৎসগুলোকে বৈচিত্র্যময় করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণ করতে হবে, কারণ এটি সবচেয়ে নিশ্চিত এবং টেকসই পদ্ধতি।

সানেম জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ পরিচালনার জন্য এমন একটি কৌশলগত পদ্ধতির আহ্বান জানায়, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের প্রসার, দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রভাব ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর নীতিব্যবস্থার মাধ্যমে ভর্তুকির বোঝা নিরসনের ওপর গুরুত্ব দেয়। তাছাড়া মোট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বাজেটে জ্বালানি খাতের বাজেট অংশ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, সানেম উল্লেখযোগ্যভাবে এ বরাদ্দ বৃদ্ধি করার সুপারিশ করছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম