Logo
Logo
×

জাতীয়

পাসপোর্টের সব খবর

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১০:২৯ পিএম

পাসপোর্টের সব খবর

জাতীয় পরিচয়পত্রের মতোই পাসপোর্ট হলো একজন নাগরিকের জাতীয়তা ও পরিচয় প্রমাণকারী একটি সরকারি নথি। তবে এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য। এতে ধারকের নাম, ছবি, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, জাতীয়তা, ধারক নম্বর, ইস্যু ও মেয়াদ উল্লেখ থাকে। 

বাংলাদেশ বর্তমানে ই-পাসপোর্ট তথা ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টের যুগে অবস্থান করছে। এখন উন্নত বিশ্বের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশিরাও মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন।

আর যে কেউ এখন ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারছেন। 

তবে আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় তথ্য, ই-পাসপোর্ট করার নিয়মনীতি, খরচ এবং হাতে পাওয়ার সময় সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। কারণ অনলাইনে একবার আবেদন জমা দেওয়ার পর, তথ্য ভুল গেলে তা সংশোধন করার সুযোগ থাকবে না। এছাড়া ই-পাসপোর্টের জন্য একটি ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একবারই আবেদন করা যাবে। 

এখন যেহেতু পুরনো পাসপোর্টের (এমআরপি) পরিবর্তে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, তাই আপনি চাইলেও আর এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারবেন না। এছাড়া আগের পাসপোর্ট রিনিউ কিংবা নতুন করে ইস্যু করার ক্ষেত্রেও আপনাকে এই ই-পাসপোর্টই দেওয়া হয়।

বর্তমানে কারও কোনো সহযোগিতা (দালাল) ছাড়াই, যে কেউই অনলাইনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন হবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ। তবে পাসপোর্টের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্ট দরকার হয়। তাই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে, আপনি আসলে কোন ধরনের পাসপোর্ট করতে আগ্রহী। 

এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক, বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্ট সম্পর্কে এবং কি কি ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে সেসব সম্পর্কে-

পাসপোর্টের ধরনসমূহ: বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের পাসপোর্ট করা হয়ে থাকে। যেমন-
    শিশুদের পাসপোর্ট,
    প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট এবং
    সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট।

অর্থাৎ আবেদনকারীর বয়স হিসেবে পাসপোর্টের ধরন ভিন্ন হয়। তাছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডকুমেন্টস হিসেবে NOCবা অনাপত্তি সনদ এবং GOবা সরকারি আদেশ প্রয়োজন হয়। এই ধরনের পাসপোর্টকে Government Order পাসপোর্টও বলা হয়।

এবার আসুন জেনে নিই, পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে-
ই-পাসপোর্ট করতে হলে প্রথমত, আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে। এই ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদন জমা দেওয়ার দিনক্ষণও পাওয়া যাবে এখানেই। সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ক্ষেত্রেও নেই কোনো সত্যায়ন করার ঝামেলা। 

প্রাপ্ত বয়স্কদের পাঁচ বছর কিংবা ১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হবে। আর বয়স ২০ বছরের কম হলে তাদের জন্য প্রয়োজন হবে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং বাবা-মায়ের আইডি কার্ডসহ নাগরিক সনদপত্র।

পেশা প্রমাণের জন্য শিক্ষার্থী হলে স্টুডেন্ট কার্ড এবং চাকরিজীবী হলে চাকরির আইডি কার্ড প্রয়োজন হবে। আর সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য NOC এবং GO প্রয়োজন। অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ফি পরিশোধ করে, চালান রশিদ এবং থ্রি-আর সাইজের ছবি প্রয়োজন হবে।

বয়সভেদে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার আগে যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে, আসুন এ সম্পর্কে এবার বিস্তারিত জেনে নিই-

১) শিশুদের ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো-
    শিশুর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ,
    গার্ডিয়ান হিসেবে বাবা-মায়ের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি (বাধ্যতামূলক),
    অনলাইন আবেদনের কপি,
    জমা দেওয়া আবেদন ফি’র স্ক্যান কপি (ব্যাংক ড্রাফ্ট করা চালানের কপি),
    টিকা কার্ড (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে) এবং
    থ্রি-আর সাইজের ছবি (আবশ্যিক)।
তবে যাদের বয়স ১৮ বছরের ওপরে এবং যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড আছে, তাদের ক্ষেত্রে গার্ডিয়ান ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে না। তারা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো সাধারণভাবেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

২) প্রাপ্তবয়স্কদের ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো-
    জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) বা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি,
    ইউনিয়ন অথবা পৌরসভা চেয়ারম্যান কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র,
    ইউটিলিটি (গ্যাস, বিদ্যুৎ) বিলের কাগজের স্ক্যানকপি,
    অনলাইন আবেদনের সারাংশ,
    অনলাইন আবেদনের কপি (৩ পাতার আবেদন কপি),
    জমা দেওয়া আবেদন ফি’র স্ক্যান কপি (ব্যাংক ড্রাফ্ট করা চালানের কপি),
    আবেদনকারী শিক্ষার্থী হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড অথবা সার্টিফিকেট কপি,
    বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (অপশনাল)
    বিবাহিত হলে বিবাহের সনদের কপি।

৩) সরকারি চাকরিজীবীদের ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো-
    আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের কপি,
    নাগরিক সনদপত্র,
    ইউটিলিটি বিলের কপি,
    অনলাইন আবেদনের সারাংশ,
    অনলাইন আবেদনের কপি (৩ পাতার আবেদন কপি),
    বিবাহিত হলে বিবাহের সনদের কপি,
    NOC বা অনাপত্তি সনদ এবং GOবা সরকারি আদেশ।

সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সাধারণত NOC ও GO-এই ২টি ডকুমেন্ট অতিরিক্ত হিসেবে প্রয়োজন হবে। আর যারা রাষ্ট্রীয় কাজে সরকারি আদেশে দ্রুত দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন তাদের ক্ষেত্রে GO বা সরকারি আদেশের প্রয়োজন হবে।

এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে ডকুমেন্ট দুটি সংগ্রহ করে তার কপি জমা দিতে হবে। 

পাসপোর্টের এই তিনটি ধরন এবং সরকারি নথি অনুযায়ী বাংলাদেশে পাসপোর্ট সাধারণত চার প্রকার। যেমন-
•    সাধারণ পাসপোর্ট: যা সাধারণ নাগরিকের জন্য।
•    অফিসিয়াল পাসপোর্ট: যা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য।
•    ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট: যা কূটনীতিকদের জন্য।
•    জরুরি পাসপোর্ট: যা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ভ্রমণের জন্য।

যেভাবে করবেন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন
আগেই বলেছি যে, অনলাইনের মাধ্যমে সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়। তবে প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে গিয়ে একটা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। আর এজন্য ওই ওয়েবসাইটে ঢুকে শুরুতেই ‘অ্যাপ্লাই অনলাইন’ অথবা ‘অ্যাপ্লাই অনলাইন ফর ই-পাসপোর্ট/রি-ইস্যু’ অপশনের নিচে থাকা ‘ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এভাবেই সরাসরি আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। তবে আবেদন করার আগে দেখে নিতে হবে, ই-পাসপোর্ট আবেদনের পাঁচটি ধাপ। 

প্রথম ধাপে আপনার জেলা শহরের নাম ও থানার নাম নির্বাচন করে কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে।দ্বিতীয় ধাপে একটি সচল ই-মেইল আইডি এবং নিরাপত্তা ক্যাপচায় ক্লিক করে কন্টিনিউ বাটনে ক্লিক করতে হবে।তৃতীয় ধাপে পাসওয়ার্ডসহ ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টটি সম্পন্ন করতে হবে।

ই-মেইল ভেরিফিকেশন
এই ধাপের কাজ শেষ হলেই মূল পাসপোর্ট সার্ভার থেকে আপনার ই-মেইলে একটি রিপলাই মেইল পাঠানো হবে। যেখানে অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভেশন লিংক দেওয়া থাকবে। এখন আপনার ই-মেইল থেকে ওই লিংকে ক্লিক করলেই আপান্র অ্যাকাউন্টটি অ্যাকটিভ হয়ে যাবে।

পাসপোর্টের ধরন বাছাই
এরপর আপনাকে পাসপোর্টের ধরন বাছাই করতে হবে। এখানে আপনি মূলত দুইটা অপশন দেখতে পাবেন। একটি হলো- অর্ডিনারি পাসপোর্ট, অপরটি অফিসিয়াল পাসপোর্ট।

সাধারণত সাধারণ নাগরিকরাই অর্ডিনারি পাসপোর্ট ধরনটি সিলেক্ট করে থাকেন। আর অফিসিয়াল পাসপোর্ট হচ্ছে- সরকারি চাকরিজীবী ও কর্মকর্তাদের জন্য। একে সরকারি পাসপোর্টও বলা হয়।

এবার চতুর্থ ধাপে আপনাকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। এখানে, যদি নিজের জন্য আবেদন করেন, তাহলে I apply for myself অপশনে টিক মার্ক দেবেন। তারপর পর্যায়ক্রমে লিঙ্গ, নাম, পেশা, জন্ম তারিখ, জন্ম স্থান, ধর্ম এবং জাতীয়তা নির্বাচন করতে হবে।

ঠিকানা নির্বাচন
ই-পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে এই ধাপে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে ঠিকানা নির্বাচন। আপনি পাসপোর্টে যে ঠিকানা নির্বাচন করবেন, সেই ঠিকানাতেই কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। তাই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যাতে কোনোরকম ঝামেলা না হয়, সেজন্য আপনাকে ঠিকানাটা সঠিকভাবে লিখতে হবে।

এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ডের পেছনে যে ঠিকানা লেখা আছে, সেটাই দেওয়া উত্তম। আইডি কার্ডে তথ্যগুলো যেমন আছে, ঠিক তেমনভাবেই আবেদন ফরম পূরণ করুন। 

কারণ, এই আবেদনে ভুল করলে পরে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। এতে সময় ও অর্থ দু-ই অপচয় হয়ে থাকে।

আপনার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই হলে Present Address same as Permanent এটি নির্বাচন করে দিলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বর্তমান ঠিকানার ঘরে একই তথ্য বসে যাবে।

তবে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হলে, আপনাকে আলাদাভাবে লিখে পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা থানা ভেরিফিকেশনও উভয় ঠিকানায় হবে।

আইডি ডকুমেন্টস
যেহেতু আপনি একটি নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে চলেছেন, তাই No, I don’t have any previous passport অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। তবে যদি আগে কোনো MRP বা ই-পাসপোর্ট থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে পাসপোর্টের ধরন অনুযায়ী অপশন বাছাই করতে হবে।

এরপর আপনার কাছে জানতে চাওয়া হবে- আপনার অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে Yes I have, আর না থাকলে No, I don’t have নির্বাচন করেছি।

এরপর আপনার এনআইডি কার্ডের নম্বর দিয়ে আইডি ডকুমেন্ট ধাপটি সম্পন্ন করুন। আবেদনকারীর বয়স ২০ বছরের কম হলে, জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে হবে।

মা-বাবার তথ্যপূরণ
Parental information ধাপে আবেদনকারীর মা-বাবার তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে বাবার নাম, মায়ের নাম, তাদের পেশা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর- সবকিছুই তাদের এনআইডি কার্ড অনুযায়ী দিয়ে আবেদন ফরমটি পূরণ করতে হবে।

বৈবাহিক অবস্থার তথ্য
এখানে আবেদনকারীর বৈবাহিক অবস্থা পূরণ করতে হবে। ড্রপডাউন মেনু থেকে Marital Status বাছাই করে বিবাহিত বা অবিবাহিত অপশন সিলেক্ট করে দিতে হবে।

এছাড়াও আরও দুটি অপশন দেখতে পাবেন। সেগুলো হলো-

•    SINGLE
•    MARRIED
•    DIVORCED
•    WIDOWER or WIDOW

এখান থেকে আপনাকে নিজের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী একটি অপশন বাছাই করতে হবে।

জরুরি যোগাযোগ
Emergency  Contactঅপশনে আপনাকে খুব কাছের একজনের তথ্য দিতে হবে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য। এ ক্ষেত্রে আপনি মা, বাবা, বড় ভাই বা স্ত্রী- যে কোনো একজনের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে পারেন।

কর্তৃপক্ষ জরুরি প্রয়োজনে যাতে খুব সহজে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সেই জন্য মোবাইল নম্বর ও সরাসরি যোগাযোগের ঠিকানা দিতে হয়। আর তথ্যগুলো ওই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী পূরণ করা উত্তম।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের ক্ষেত্রে কিন্তু ওই Emergency contact-এ দেওয়া নম্বরেই যোগাযোগ করা হয়। এছাড়া কোনো কারণে আবেদনকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বার্থ হলে, ওই জরুরি যোগাযোগের ঠিকানা বা মোবাইল নম্বরই ব্যবহার করা হয়।

পাসপোর্টের ধরন বাছাই
এখন আপনি কোন ধরনের পাসপোর্ট নিতে চাচ্ছেন, সেটি বাছাই করতে হবে। পাসপোর্টের পাতা সংখ্যা এবং পাসপোর্টের মেয়াদের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত চার ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।

•    পাঁচ বছর মেয়াদী- ৪৮ পৃষ্ঠা,
•    পাঁচ বছর মেয়াদী- ৬৪ পৃষ্ঠা,
•    দশ বছর মেয়াদী- ৪৮ পৃষ্ঠা,
•    দশ বছর মেয়াদী- ৬৪ পৃষ্ঠা।

এক্ষেত্রে আপনি কতগুলো দেশ ভ্রমণ করবেন বা পাসপোর্টের পাতাগুলো কিভাবে ব্যবহার করবেন- সেটা বিবেচনা করে ৪৮ বা ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট আবেদন করতে পারেন। ব্যবসায়িক কাজে বা খুব বেশি দেশ ভ্রমণ না করলে সাধারণত ৪৮ পাতার পাসপোর্টই বেশি ব্যবহার করা হয়।

কত দিনের মধ্যে ডেলিভারি চান? 
সর্বোচ্চ কত দিন বা সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারি হবে, তার ওপর ভিত্তি করে ডেলিভারির ধরণকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বর্তমানে রেগুলার, এক্সপ্রেস এবং সুপার এক্সপ্রেস- এই ভাগে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।

তবে অনলাইনে কেবল রেগুলার এবং এক্সপ্রেস- এই দুই ধরনের ডেলিভারি টাইপ বাছাই করা যায়।

রেগুলার বেসিসে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ২১ দিন সময় লাগে। আবেদনে কোনোরকম সমস্যা না থাকলে এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হয়ে গেলে ১৪ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যান আবেদনকারী।

আর যারা জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট হাতে পেতে চান, তারা সাধারণত এক্সপ্রেস ডেলিভারি বাছাই করে থাকেন। যাদের ভিসার মেয়াদ সীমিত কিংবা কিছুটা তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট প্রয়োজন, তারা তাদের আবেদনে এক্সপ্রেস অপশনটি বাছাই করেন।

অন্যদিকে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি বা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পেতে চাইলে আপনাকে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে যথাযথ কারণ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে। চিকিৎসার কারণে বিদেশে যাওয়া কিংবা ইমার্জেন্সি পাসপোর্ট প্রয়োজন হলে সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি নিতে পারবেন।

পাসপোর্ট ফি
ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণের শেষ ধাপে আপনাকে সরকার নির্ধারিত পাসপোর্ট ফি দিতে হবে। ই-পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার জন্য দুটি মাধ্যম রয়েছে। একটি হলো- অনলাইন পেমেন্ট। অপরটি হলো- ব্যাংকের মাধ্যমে (ব্যাংক ড্রাফট) পেমেন্ট।

ই-পাসপোর্ট ফি অনলাইনে পেমেন্ট করার ব্যবস্থা থাকলেও, সবচেয়ে নিরাপদ হলো- ব্যাংক ড্রাফট করা। এক্ষেত্রে অফলাইন পেমেন্ট অপশনটি বাছাই করতে হবে।

এরপর আবেদন সাবমিট করার পালা। তবে তার আগে আবেদন সামারি থেকে তথ্যগুলো ভালো করে যাচাই করে নিন।

আবেদন কপি প্রিন্ট করতে হবে
উপরের প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করলে আপনি সফলভাবে ই-পাসপোর্ট আবেদনের একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। সঠিকভাবে আবেদন সাবমিট হয়ে গেলে, এবার অ্যাপ্লিকেশন সামারি ও অ্যাপ্লিকেশন কপি ডাউনলোড অপশন দেখতে পাবেন।

এখন আপনি অ্যাপ্লিকেশন সামারি ও অ্যাপ্লিকেশন কপি প্রিন্ট অথবা পিডিএফ আকারে সংগ্রহ করুন। ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে যেসব কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট প্রয়োজন, সেগুলোর সঙ্গে আবেদনের এই কপিটি সংরক্ষণ করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট আবেদন সাবমিট হয়ে গেলে, পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে যেসব কাগজপত্র জমা দেওয়া লাগে, সেগুলো প্রস্তুত করুন। আর যদি পাসপোর্ট ফি অফলাইন সিলেক্ট করে থাকেন, সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দিয়ে রিসিট বা চালান রশিদ সংগ্রহ করুন।

প্রয়োজনীয় সবধরনের ডকুমেন্টস বা কাগজপত্র প্রস্তুত হয়ে গেলে, সেগুলো পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া এবং বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার পর যে কোনো দিন (ছুটির দিন ব্যতীত) আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গেলেই হবে।

সেখানে গিয়ে অনলাইনে আবেদনের কপি এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো জমা দিলে, তারা প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার পর আপনার হাতের ছাপ, স্বাক্ষর, ছবি অর্থাৎ বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করবে। এরপর অফিস থেকে আপনাকে একটি ডেলিভারির স্লিপ বা টোকেন দেওয়া হবে। যেটি আপনাকে অতি যত্নসহকারে সংরক্ষণ করতে হবে।

এদিকে ই-পাসপোর্ট আবেদন সাবমিট করার ৬ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত না হলে বা আবেদন কপি, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা না দিলে ওই আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।

পাসপোর্ট সংগ্রহ
আবেদনের পর আপনার পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার প্রথম আলামত হচ্ছে- পুলিশ ভেরিফিকেশ। পাসপোর্ট ইস্যু হওয়ার আগে ব্যক্তির নামে কোনোধরনের মামলা-মোকদ্দমা আছে কিনা, তা ভেরিফাই করার জন্যই আপনার নিজ থানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন পাঠানো হয়।

আর এজন্য আপনাকে সেই থানায় যেতে হতে পারে অথবা পুলিশ খোঁজখবর নেওয়ার জন্য আপনার বাড়িতে যেতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। আপনার সম্পর্কে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

অতঃপর যখন আপনার পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে এবং রেডি হয়ে যাবে, তখন আপনার মোবাইলে মেসেজ দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।

ই-পাসপোর্ট হয়ে গেলে অবশ্য আপনাকে আবার সেই পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে এবার সেই ডেলিভারি স্লিপটি দেখিয়ে এবং স্বাক্ষর করে পাসপোর্টটি সংগ্রহ করতে হবে। কোনোভাবেই একজনের পাসপোর্ট অন্যজন নিতে পারবেন না।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা
বর্তমান সময়ে পাসপোর্ট তথা এই ই-পাসপোর্টের সুবিধা বলে শেষ করার মতো না। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে- এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে আপনি এক দেশ থেকে অন্য দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। এর ফলে বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয় না। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাই। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে, থাকবে আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। 

এসব ঠিকঠাক থাকলে আপনি দ্রুত ইমিগ্রেশন করতে পারবেন। তবে কোনো সমস্যা দেখা দিলে লালবাতি জ্বলে উঠবে। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা, লালবাতি সেটাও জানিয়ে দেবে সঙ্গে সঙ্গেই। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম