দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে সর্বদা নিয়োজিত থাকব: সেনাপ্রধান
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে সর্বদা নিয়োজিত থাকব। দুর্যোগ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তার জন্য সরকার যে দায়িত্ব দেবে, সেই দায়িত্ব পালন করব। পাশাপাশি বিশ্বশান্তির জন্যও কাজ করবে সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা উসকানিমূলক কিছু না করে সর্বদা প্রস্তুত আছি।
রোববার দুপুরে বিদায়ি সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ তার দপ্তরে নতুন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জেনারেল হিসাবে পদোন্নতির ব্যাজ পরিয়ে দেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। বিকালে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। একই দিন বিদায়ি সেনাপ্রধানের বিদায়ের নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। জেনারেল শফিউদ্দিন সকালে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেনাকুঞ্জে তাকে বিদায়ি গার্ড অব অনার জানানো হয়। সেখানে তিনি গাছের চারা রোপণ করেন।
সেনাসদরে দায়িত্ব হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতার পর উভয়ে ফটোসেশনে অংশ নেন। তারপর প্রথা অনুযায়ী বিদায়ি সেনাপ্রধান পুষ্পসজ্জিত খোলা জিপে আরোহণ করেন। সেনাবাহিনীর অফিসাররা রশি দিয়ে টেনে নিয়ে যান। এ সময় রাস্তার উভয় পাশ থেকে কর্মকর্তারা ফুল দিতে থাকেন। তিনি অনেকটা আবেগাপ্লুতভাবে সেগুলো গ্রহণ করেন।
সাংবাদিকদের নতুন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, প্রথমে আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এটা একটা গুরুদায়িত্ব। সবাই দোয়া করবেন যাতে সুন্দরভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ওনার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। তার সঙ্গে আমার কাজের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত ভালো। আমি যখনই যে সিদ্ধান্ত চেয়েছি; তিনি অত্যন্ত দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই। সব শহিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। কারণ, তারা তাদের সোনালি দিনগুলো আমাদের জন্য উৎসর্গ করেছেন।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সিভিল পাওয়ারের সহায়তায় কাজ করে থাকে। দুর্যোগ মোকাবিলায় যখন সরকার আমাদের দায়িত্ব দেবে, তখন আমরা সেই দায়িত্ব পালন করব। বিশ্বশান্তির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে সর্বদা নিয়োজিত থাকব।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে সব সময় সুশৃঙ্খল রাখতে আমি কাজ করে যাব। ট্রেনিং আমরা সব সময় করছি। ট্রেনিংটা যেন জারি থাকে, সেটা দেখব। সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালন করছে। দেশ ও জাতি গঠনে যখনই আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে; তখনই আমরা সেই দায়িত্ব পালন করব।
মিয়ানমারের সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন সেনাপ্রধান বলেন, আমরা এনগেইজড সব দেশের সঙ্গে। মিয়ানমারের সঙ্গেও আমরা এনগেইজড। দেশটিতে আমাদের ডিফেন্স অ্যাটাশে আছেন। তারা (মিয়ানমার) নিজেদের দেশেই একটা গৃহযুদ্ধের মধ্যে আছে। আমার মনে হয় না যে, এ মুহূর্তে তারা অ্যাগ্রেসিভ কিছু করবে। তারপরও সেনাবাহিনী সব সময় প্রস্তুত আছে। নৌবাহিনী টহল বাড়িয়েছে। বর্ডার গার্ডও প্রস্তুত আছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ছাড়া আমাদের আর কোনো অমীমাংসিত ইস্যু নেই। আমরা চাই, তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে যাক। এছাড়া তাদের প্রতি আমাদের কোনো বিদ্বেষ কিংবা অন্য কোনো ধরনের সমস্যা আমি দেখি না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা কখনো হতাশ নই।