‘নিরপরাধ স্বামীকে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশে খুন করা হয়েছে’, আদালতে কাঁদলেন স্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ০৬:০১ পিএম
ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যা মামলার বিচার চেয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার স্ত্রী ফারহানা ইসলাম। ফারহানা আদালতকে বলেছেন, রাজনৈতিক বিরোধের জেরে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশেই তার স্বামীকে খুন করা হয়। যারা তার স্বামীকে খুন করেছেন, তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি। আগামী ১৮ জুলাই এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিক উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
পিপি রফিক উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম হত্যা মামলার বিচার চেয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার স্ত্রী ফারহানা ইসলাম। আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সময় তিনি কেঁদে ফেলেন।
আদালতকে ফারহানা বলেন, তার নিরপরাধ স্বামীকে রাজনৈতিক কারণে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের নির্দেশে খুন করা হয়েছে।
এর আগে ২৯ এপ্রিল জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এসব আসামির মধ্যে ১৯ জন কারাগারে আছেন। জামিনে ৮ জন ও পলাতক ৬ জন।
২০২২ সালের ২৪ মার্চ শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
গত বছরের ৫ জুন এ মামলায় তালিকাভুক্ত দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৩৩ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
অভিযোগপত্রের তথ্য ও ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মতিঝিলকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক আধিপত্য- এ দুই কারণে জাহিদুলকে হত্যা করা হয়। হত্যার পরিকল্পনায় বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ও জাফর আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৩০ জনের নাম এসেছে। আর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন তিনজন।
ডিবির তথ্যমতে, পরিকল্পনায় কারা ছিলেন, হত্যায় কয়জন অংশ নিয়েছিলেন, কার কী ভূমিকা ছিল, দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে তদন্ত করে সেসব তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একেকজনের একেক ধরনের ভূমিকা ছিল। এ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, তার বন্ধু মোল্লা শামীম ও পলাশ ওরফে কাল্লা পলাশ। অন্যরা সবাই হত্যার পরিকল্পনাকারী।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিবি ‘শুটার’ মাসুমকে গ্রেফতার করে। পরে তার জবানবন্দিতে সমন্বয়কারী সুমন শিকদার ওরফে মুসার নাম আসে। তাকে ওমান থেকে গ্রেফতার করে গত বছরের জুনে ঢাকায় আনা হয়। পরে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দিতে এ হত্যায় জড়িত বলে যাদের নাম আসে তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।