বেবিচক কনসালটেন্টদের বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারির ১ দিন পর স্থগিত করেছে মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এই স্থগিতাদেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অনুপ কুমার তালুকদার স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই স্থগিতাদেশের কথা বলা হয়েছে। আদেশের চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ২৯৩তম বোর্ড সভায় সংস্থার কনসালটেন্টদের বেতন বৃদ্ধিসংক্রান্ত বিষয় বোর্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে অনুমোদিত হয়। অনুমোদনকৃত দুটি সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা স্থগিত করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। একই সঙ্গে বেবিচকের পরামর্শকদের ফি বৃদ্ধিসংক্রান্ত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে ১১ জুন বেবিচক পরিচালক (প্রশাসন) আবু ছালেহ মুসা জঙ্গী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছিল, কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের ৩ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, ৪ জন ফ্লাইট অপারেশন্স ইন্সপেক্টর, ২ জন স্পেশাল ইন্সপেক্টর, ২ জন জুনিয়র এয়ার ট্রান্সপোর্ট ও ২ জন জুনিয়র লাইসেন্সি কনসালটেন্টের ফি ১০০ শতাংশ এবং অন্য পারমর্শকদের ফি ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো। এই আদেশ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, ৪ জুন যুগান্তরে ‘ক্ষুব্ধ বেবিচক স্থায়ী কর্মীরা-কনসালটেন্টদের বেতন বৃদ্ধি’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়, পরামর্শকদের বেতন বৃদ্ধি করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বেবিচকের কর্মচারীরা। তারা বলছেন, যারা বেবিচকের স্থায়ী কর্মচারী তারা যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করলেও বেতন অনেক কম। অন্যদিকে পরামর্শকরা চুক্তিভিত্তিক হলেও তাদের বেতন অনেক বেশি। এবারের ঘটনার পর বেবিচক কর্মচারী ও পরামর্শকদের বেতনের মধ্যে বিশাল পার্থক্য দেখা দিয়েছে। একই কাজ করে পরামর্শকরা বেশি বেতন পেলেও কর্মচারীরা কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিভাগে বর্তমানে ৫৪ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, কনসালটেন্ট, বিশেষ পরিদর্শক, জুনিয়র কনসালটেন্ট, ডিএফওআই, ডিএমই, এভিয়েশন আটর্নি পদে চুক্তি ভিত্তিতে পরামর্শক খাতে কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগেই কর্মরত রয়েছেন ৪৯ জন, এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগে চারজন ও ফাইন্যান্স বিভাগে একজন পরামর্শক কর্মরত।
বেবিচকের ২৯৩তম বোর্ড সভায় উপস্থাপিত পরামর্শকদের বেতন বৃদ্ধিসংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪ জন পরামর্শকের মধ্যে সাতজন ডেজিগনেটেড ফ্লাইট অপারেশন্স ইন্সপেক্টর ও ৪ জন এভিয়েশন মেডিকেল এক্সামিনার (খণ্ডকালীন হিসাবে কর্মরত) বাকি সবাই সার্বক্ষণিকভাবে কর্মরত। এই পরামর্শকরা নিয়মিত কর্মকর্তাদের মতোই সার্বক্ষণিকভাবে দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত। তারা রেগুলেটরি ডকুমেন্ট প্রস্তুত থেকে শুরু করে নিয়মিতভাবে রেগুলেটরি অডিট সম্পন্ন করে থাকেন। তাদের নিরন্তর পরিশ্রমের ফলে বর্তমানে কর্তৃপক্ষের রেগুলেটরি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া আইকাও সেইফটি রেটিং ৭৫.৩৪ শতাংশ এবং সিকিউরিটি রেটিং ৭৭.৭ শতাংশে উন্নীত হওয়ার পেছনে নিয়মিত কর্মকর্তাদের পাশাপাশি এসব চুক্তিভিত্তিক পরামর্শকের ভূমিকা রয়েছে।
সভায় উপস্থিত বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি যুগ্মসচিব মুহম্মদ আশরাফ আলী ফারুক বলেন, কনসালটেন্টদের ফি বৃদ্ধিতে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। এজন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার কথা জানান তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই সভায় উপস্থিত থাকা বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, বেবিচক কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান এবং বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় পরামর্শকদের ফি বৃদ্ধির ক্ষমতা বোর্ড সংরক্ষণ করে। তাই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
যুগান্তরে এই রিপোর্ট প্রকাশের পর বেবিচক থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। বেবিচকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ সোহেল কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ২০১৬ সালের পর থেকে কন্সালটেন্টদের বেতন বাড়ানো হয়নি। সর্বশেষ আইকাও’র অডিটে বিশেষজ্ঞ ইন্সপেক্টর বা পরামর্শকদের কর্তৃপক্ষে ধরে রাখার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। তাদের পরামর্শ ফি বৃদ্ধি না করায় কনসালটেন্টরা কাজের প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে পারছেন না বলে প্রতীয়মান হয়। আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে আইকাও অডিট অনুষ্ঠিত হবে। এ অডিটে উত্তীর্ণ হতে না পারলে পুনরায় বাংলাদেশের ক্যাটাগরি ডাউন হবে। ফলে সিভিল এভিয়েশন তথা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রভাব দেশের এভিয়েশন খাতেও পড়বে। এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে করসালটন্টেদের পরামর্শক ফি বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।