পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি । এটি মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই দিনটি উদযাপনে পরম আনন্দে অপেক্ষা করছে। সারা বিশ্বের মুসলমানরা ঈদুল আজহায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কুরবানি দিয়ে থাকেন। সেই কুরবানির লক্ষ্যে পশুরহাটে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের পছন্দের পশু কিনতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কুরবানির সুস্থ গরু চেনার উপায় কি? এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাশেম বলেছেন, স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু দেখতে আকর্ষণীয়, চকচকে ও হৃষ্টপুষ্ট দেখালেও আসলে সেগুলো মোটাতাজা হয় না। বরং এসব ক্ষতিকর উপাদান রান্নার পরও মাংসে থেকে যাওয়ায় তা খেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ইনজেকশন দেওয়া গরু ধরিয়ে দিচ্ছে ক্রেতাদের মাঝে। এখন তারা গবাদিপশুকে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করতে ব্যস্ত। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশন ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে এসব পশুকে মোটাতাজা করে থাকেন তারা, যা পুরোপুরি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
যেভাবে চিনবেন সুস্থ গরু
সুস্থ গরু চেনার উপায় ও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু বিশেষজ্ঞরা। তারা মূলত কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
১. ওষুধ দেওয়া গরুর মাংসপেশি থেকে শুরু করে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফোলা থাকবে। দেখা যাবে শরীর ফোলা। পানি জমায় বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় লাগবে।
২. অসুস্থ গরু খুবই শান্ত থাকবে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে গরু চলাফেরা করতে পারবে না।
৩. রাসায়নিকযুক্ত গরু ভীষণ ক্লান্ত থাকবে এবং ঝিমাবে। কিন্তু সুস্থ গরুর গতিবিধি চটপটে থাকবে। এ পরিস্থিতি বুঝে আপনাকে গরু কিনতে হবে।
৪. ওষুধ খাওয়ানো গরুর শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে থাকে। মনে হবে যেন হাঁপাচ্ছে।
৫. অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়ার কারণে গরুর মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরবে। কোনো কিছুই খেতে চাইবে না। সুস্থ গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে সেটি টানাহেঁচড়ে খেতে চাইবে। তা না হলে জাবর কাটতে থাকবে।
৬. সুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশ ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে। কিন্তুঅসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনো।
৭. সুস্থ গরুর শরীরের রঙ উজ্জ্বল থাকবে। গরুর পিঠের কুজ মোটা, টান টান ও দাগমুক্ত হবে।
৮. সুস্থ গরুর রানের মাংস শক্ত থাকবে। যেখানে ওষুধ দেওয়া গরুর পা হবে নরম থলথলে।
৯. অসুস্থ গরুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে।
১০. সুস্থ গরুর পাঁজরের হাড় কয়েকটা তা বোঝা যাবে।
কুরবানির আরও কিছু তথ্য আমাদের জানা উচিত
ওষুধ অবলম্বনে মোটাতাজা করা গরুগুলো অনেক সময় কেনার পর কুরবানির অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে দেশি গরু কেনার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কুরবানির জন্য কোন পশুটি উপযুক্ত তা জেনে নেওয়া খুবই জরুরি।
– গরুর বয়স দুই বছর হলেই এটা কুরবানির জন্য উপযুক্ত। এ ক্ষেত্রে গরুর দাঁত দেখে বয়স যাচাই করে নিতে হবে। গরুর নিচের পাটিতে যদি দুধ দাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে গরুটি কুরবানির উপযুক্ত।
– গরুটিসম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে। এ জন্য শিং ভাঙা লেজ কাটা কিংবা মুখ, জিহ্বা, শরীর, পা, ক্ষুর, গোড়ালিতে কোনো ক্ষত আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
– গাভী কুরবানি দেওয়া গেলেও তার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে যে গাভীটি গর্ভবতী কিনা। গর্ভবতী গাভী কোনো অবস্থাতেই কুরবানির উপযুক্ত নয় এবং দেওয়া যাবে না।
সূত্র : বিবিসি বাংলা