আমাদের দেশে যে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত, তাকে বেশি সম্মান করে: দুদক কমিশনার
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪, ০৯:০২ পিএম
![আমাদের দেশে যে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত, তাকে বেশি সম্মান করে: দুদক কমিশনার](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/06/06/image-813692-1717686080.jpg)
বাংলাদেশে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বেশি সম্মান করা হয় বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যতীত বিশ্বের কোনো দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সম্মান করে না। ভিয়েতনাম, চীন আইন করেছে- কোনো ঋণখেলাপি, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি সামনের কাতারে বসতে পারবে না, প্রথম শ্রেণির সুবিধা পাবে না, গাড়ির লাইসেন্স পাবে না; কিন্তু আমাদের দেশে যে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত, তাকে বেশি সম্মান করে। এতে ওই লোক আরও বেশি উৎসাহিত হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে দুদকের এক গণশুনানিতে এ কথা বলেন তিনি।
দুদক কমিশনার বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে অপছন্দের কথা তাকে সরাসরি বলতে হবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি এবং ঘুষের সঙ্গে যারা জড়িত না তাদের দুর্নীতি দমন কমিশন কিছুই করতে পারবে না। অতএব দুদককে তারাই ভয় পায়, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত বা ঘুস আদান-প্রদানকারী।
জহুরুল হক বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর। আমি নারায়ণগঞ্জের জেলা জজ ছিলাম। আগে এখান থেকে লিংক রোডে যেতে আধ ঘণ্টা লাগত, এখন আমার পাঁচ মিনিটও লাগে নাই। কিন্তু এই উন্নয়ন কখনই টেকসই হবে না যদি আমাদের নৈতিক শিক্ষা না হয়। একটু সজাগ থাকলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
দুদক কমিশনার বলেন, আগে নিজে ভালো হোন তারপর ভালো কথা বলেন। আমি ভালো হলে সমাজ ভালো হয়ে যাবে। এই দেশের মালিক আপনি, বাকিরা আপনার সেবাদাতা। বস্তুনিষ্ঠ, ন্যায্য অভিযোগ আপনারা দিবেন। দুদকের সবগুলো আঞ্চলিক অফিসকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোনো অভিযোগ দাতাকে হয়রানি করলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সমালোচনা করে দুদকের কমিশনার বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে একটা কমন সমস্যা আছে। ব্যবসার কারণে হাসপাতালগুলোকে প্রাইভেট সংস্থা বানিয়ে ফেলছে। হাসপাতালগুলো সরকারি সংস্থা, এগুলো যেন প্রাইভেট সংস্থা না হয়। অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা নয়টা-পাঁচটা অফিস করে, ওই বেতনেই তাদের দিন যায়। ডাক্তার সাহেবরা নয়টা-পাঁচটা অফিস করার পরেও অনেক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারে। তারপরও তাদের কেন অভাব পড়ে? তাদের কেন এজেন্সি লাগে, প্রাইভেট ক্লিনিক লাগে, কেন মানুষের কাছ থেকে অহেতুক টেস্টের টাকা নেয়? আপনার সবাই একটু তৎপর হবেন, তাহলে মানুষ সেবা পাবে।
সাংবাদিকদের প্রতি দুদক কমিশনার বলেন, সঠিক খবরটা আপনারা দিবেন। খবর যেন অতিরঞ্জিত না হয়, পরিসংখ্যান যা হয় তাই দিবেন। কিছু না পারলে আমি কমিশনার, আমাকে জানাবেন।
গণশুনানিতে বিদ্যুৎ বিভাগ, তিতাস গ্যাস, ভূমি অফিস, শিক্ষা অফিস, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি হাসপাতালসহ ২৭টি দপ্তরের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ৫১টি অভিযোগ উপস্থাপিত হয়। এর মধ্যে ৫টি অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। আটটি অভিযোগ তাৎক্ষণিক সমাধান দিয়ে বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
গণশুনানিতে উপস্থাপিত অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি হলো কিনা সে ব্যাপারে স্থানীয় কর্মকর্তারা ফলোআপ রাখবেন বলে জানান দুদক কমিশনার।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের সঞ্চালনায় সেখানে উপস্থিত ছিলেন- দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, পরিচালক (ঢাকা) মোরশেদ আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, কার্যালয়ের উপপরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী।