কালবৈশাখী ঝড়ের পাঁচ মিনিটের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে দিনাজপুর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ, ভেঙে গেছে ও হেলে পড়েছে শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি। এতে দিনাজপুর জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া আম, লিচু ও অন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নীলফামারীর ডিমলায় হঠাৎ বয়ে যাওয়া ঝড়ে ৪ শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আব্দুল ওয়াদুদ যুগান্তরকে বলেন, টর্নেডোর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দিনাজপুরে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জি আর ক্যাশ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত পরিবারের জন্য ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
দিনাজপুর : দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বুধবার রাত ১টা ৪৬ মিনিটে দিনাজপুরে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এ সময় বাতাসের গতি ছিল ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। কালবৈশাখী এই ঝড় চলে রাত ১টা থেকে ৫১ মিনিট পর্যন্ত। ঝড়ে উপড়ে ও ভেঙে যায় হাজার হাজার গাছ। বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে এসব গাছ ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়ে বাড়িঘর ভেঙে যায়। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার কাঁচা ও আধাপাকা বাড়িঘর। উড়ে গেছে ঘরের টিন।
দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সল রায়হান বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে সদর উপজেলার ১২শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে ও ভেঙে গেছে এই উপজেলার ৮ হাজার গাছ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০টি বিদ্যুতের খুঁটি। সদর উপজেলা ছাড়াও দিনাজপুরের বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, বীরগঞ্জ, চিরিরবন্দর, খানসামা, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ীসহ বিভিন্ন উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে আম, লিচুসহ বোরো ও ভুট্টা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নর্দার্ণ ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি-নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী স্পন্দন বসাক বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে ১১ হাজার ভোল্ট লাইনের ১২টি খুঁটি ভেঙে গেছে ও ১৪টি খুঁটি হেলে পড়েছে। এছাড়া ৪৪০ ভোল্ট লাইনের ৩৩টি খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে।
অন্যদিকে দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিনাজপুর সদর উপজেলায় বৃহস্পতিবার বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ৫শ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৫ টন চাল ও ১০ বান্ডিল টিন বিতরণ করা হয়।
ডিমলা (নীলফামারী) : ডিমলায় ঝড়ে বসতঘর ভেঙে যাওয়ায় অনেকে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। নাউতরার একটি মুরগির খামারের ৬ শতাধিক মুরগি মারা যায়। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার খালিশা চাপানি ও নাউতরা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ঝড়ে গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন পড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
নাউতরা ইউনিয়নের আকাশকুড়ি, নিজপাড়া, মহাজেবিন পাড়া, সাতজান ও খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা, ডালিয়া ও বাইশপুকুর গ্রামে চার শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ঝড়ে উপড়ে যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালামা বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হাতে পেলে জেলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।