রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ দিনব্যাপী ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠান, সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন করেছেন। বুধবার গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ (মৃত্যু) লাভ-এ তিন ঘটনার স্মরণে বৌদ্ধ সম্প্রদায় বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন করেন।
এ উপলক্ষ্যে দেশে বুধবার ছিল সরকারি ছুটি। বঙ্গভবনে বৌদ্ধদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। তাতে তারা বৌদ্ধসম্প্রদায়সহ সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এদিন বুদ্ধভক্তদের নানা কর্মসূচির মধ্যে ছিল প্রভাতফেরি, বুদ্ধপূজা ও সংঘদান এবং বিশেষ ধর্মীয় আলোচনা সভা। এছাড়া বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রদীপ প্রজ্বালন ও সমবেত প্রার্থনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাজধানীতে বুদ্ধ পূর্ণিমার মূল আয়োজন ছিল সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে। এছাড়া মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারেও ছিল দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা।
বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বুধবার বিকালে বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এই আয়োজনে ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আট শতাধিক আমন্ত্রিত ব্যক্তি অংশ নেন।
সকালে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পর্যন্ত ‘জাতীয় সম্মিলিত শান্তি শোভাযাত্রা’ করে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ। এতে উপস্থিত ছিলেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রমুখ।
বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে সকাল ১০টায় বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণসহ সন্ধ্যায় বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বুধবার বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারের নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কাল করেন। রাজধানীর বাসাবোতেও ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে বিভিন্ন আয়োজনে দিনটি উদযাপন করা হয়।
এছাড়া ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানেও মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ দিনব্যাপী ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বুদ্ধপূর্ণিমা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
রাঙামাটি: সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ দিনব্যাপী ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাঙামাটিতে উদযাপিত হয়েছে শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাজবন বিহারে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়। রাঙামাটি রাজবন বিহারে সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সমবেত পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে ধর্মদেশনা দেন পরিনির্বাণগত বৌদ্ধধর্মীয় গুরু আর্যপুরুষ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের উত্তরসূরি ও রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরসহ অন্য বৌদ্ধ পুরোহিতরা। এছাড়া সকাল থেকে রাঙামাটির বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধমূর্তি স্নান, প্রাতঃরাশ, বুদ্ধপূজা, পিন্ডদান, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, বুদ্ধমূর্তিদান, হাজারবাতি দান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, ধর্মদেশনা, আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়।
খাগড়াছড়ি: সকাল থেকে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে খাগড়াছড়িসহ ৯ উপজেলায় বৌদ্ধ বিহারগুলোতে এ ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়। এ উপলক্ষ্যে ধর্মপূর আর্যবন বিহার, য়ংড বৌদ্ধ বিহার, বনবিহারসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে ধর্মীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সকালে দীঘিনালা বন বিহার থেকে মঙ্গলশোভাযাত্রা বের করা হয়। এ ছাড়া বিকালে য়ংড বৌদ্ধ বিহার থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধপূর্ণিমায় উপাসক-উপাসিকা ও পুণ্যার্থীরা বুদ্ধুপূজা, পিন্ডদান, পঞ্চশীল প্রার্থনা, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, বুদ্ধ মূর্তিদান করেন।
বান্দরবান: সকালে রাজগুরু বৌদ্ধ প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হয় মঙ্গলময় শোভযাত্রা। এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন বোমাং সার্কেল চিফ রাজা উচপ্রু। এছাড়া বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন ধরনের পাত্রে চন্দন জল, ফুল, জাম পাতা এবং বৃক্ষ সজ্জিত টাকা নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভযাত্রা শেষে বোধিবৃক্ষমূলে সমাবেত হয়ে পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনার মুক্তি লাভের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এ সময় ধর্মদেশনা দেন রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ড. উ সুবর্ণ লঙ্কারা মহাথেরো। ধর্মদেশনা শেষে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার, উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহার, রামজাদী, স্বর্ণমন্দির বিহারে উপাসকরা সমবেত হয়ে পুণ্যলাভের জন্য বোধিবৃক্ষমূলে চন্দন জল ঢালেন।