জঙ্গি সংগঠন শারক্বীয়ার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী রহিম গ্রেফতার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১২:৫৬ এএম
দীর্ঘদিন ধরে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন ‘হিম ডাকাত’ গ্রুপের সর্দার আব্দুর রহিম (৩২)। পরবর্তী সময়ে আলোচিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হয়ে ওঠেন।
বিভিন্ন অস্ত্রের সঙ্গে সরবরাহ করতেন পাহাড়ের আতঙ্ক ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বোমা তৈরির সরঞ্জামও।
বুধবার পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কাছে গ্রেফতার হন তিনি। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির গহিন বনে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা দুটি ড্রামের ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার সিটিটিসির একটি টিম গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অভিযান পরিচালনা করে রহিমকে গ্রেফতার করে। এরপরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির গহিন বনে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা দুটি ড্রামের ভেতর থেকে একটি ৭.৬৫ বিদেশি পিস্তল, চারটি দেশি তৈরি বন্দুক, তিনটি বারুদ ভর্তি অস্ত্র, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি ধারালো অস্ত্র, ১৬ রাউন্ড গুলি, ১১টি কার্তুজ, ২৪টি শর্টগানের খোসা, দুটি বাইনোকুলার, একটি গ্যাস মাস্ক, একটি মোবাইল সিগন্যাল বুস্টার, দুটি ওয়াকিটকি, এসিডসদৃশ ছয় লিটার তরল পদার্থ, একটি চার্জার লাইট, একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি, ৬০ ফুট ইলেকট্রিক তার, একটি তারসহ এন্টেনা, একটি হাতুড়ি, একটি করাত, ফ্রেমসহ একটি হেক্সো ব্লেড, চারটি ইলেকট্রিক ভাল্ব ও হোল্ডার এবং একটি ত্রিপল উদ্ধার করা হয়। ড্রাম ভর্তি অস্ত্রগুলো জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে সরবরাহের জন্য নাইক্ষ্যংছড়ির গহিন বনে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহিম ২০১৯ সালের দিকে ‘রহিম ডাকাত’ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। রহিমের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, ডাকাতি, অপহরণ, বনভূমি ধ্বংসসহ বিভিন্ন অভিযোগে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজার জেলার রামু থানায় মোট ১২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার মাস্টারমাইন্ড ও সংগঠনের প্রধান শামিন মাহফুজকে গত বছরের জুন মাসে গ্রেফতারের পর শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গুলির উৎস, অর্থায়ন সম্পর্কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে শামিন মাহফুজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. ইয়াছিন এবং অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাহাড়ি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী কুকি চিনের পাশাপাশি স্থানীয় কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে শারক্বীয়ার সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের তথ্য আসে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, শামিন মাহফুজ কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় নওমুসলিমদের নিয়ে কাজ করার আড়ালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া গড়ে তোলে। নওমুসলিমদের নিয়ে কাজ করার সময় স্থানীয় অস্ত্র সরবরাহকারী মো. কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিমকে সংগঠনের দাওয়াত দেয়। তারা সংগঠনের হয়ে কাজ করতে রাজি হয় এবং অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। শামিন মাহফুজ ও অস্ত্র সরবরাহকারী কবির গ্রেফতার হলে এবং পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে আব্দুর রহিম ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যায়।