বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ১১০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি অলস বসে আছে এবং উৎপাদন ছাড়াই সেগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। এসময় তিনি বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিল্পকারখানায় লোডশেডিং না করার জন্য সরকারের নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। লোডশেডিংয়ের তথ্য তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে তেমন কোনো ঘাটতি হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এমনকি শিল্পাঞ্চলেও লোডশেডিং বাড়ছে। এ কারণে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের কথা বলছি। যখন সারা দেশে তীব্র তাপদাহ বিরাজমান ছিল।
ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (পিডিবি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেকট্রিক সাপ¬াই কোম্পানি (নেসকো) এবং রুরাল ইলেকট্রিক বোর্ড (আরইবি)। দেশের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। লোডশেডিংয়ে ভুগছে মূলত এ সংস্থার গ্রাহকেরা। মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের ৫৫ শতাংশই এ সংস্থার । তীব্র তাপদাহের সময় গ্রামাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশী লোডশেডিং ভোগ করেছে।
তিনি বলেন, আরইবির সূত্র বলছে, লোডশেডিং হয়েছে রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহী, সিলেট অঞ্চল ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো এবং বরিশালে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলায়। এসব এলাকায় ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়েছে তীব্র তাপদাহের সময়।
জি এম কাদের বলেন, ২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার কথা বলে ২ বছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে ২ বছর, ২০১৪ সালে ৪ বছর, ২০১৮ সালে ৩ বছর এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ৫ বছরের জন্য এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর ফলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইনটি কার্যকর থাকবে। এ আইন থেকে স্পষ্ট যে বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের কাছে প্রশ্ন উপস্থাপন করা যাবে না। এ আইনের আওতায় বিনা দরপত্রে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয়, দফায় দফায় অতিরিক্ত মূল্যে চুক্তি নবায়ন, অতি উচ্চমূল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি, বিনা দরপত্রে গ্যাস-বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ, অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ আইন অনুসারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংক্রান্ত কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা যাবে না।
বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, আমাদের চাহিদার ১৭ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। প্রয়োজনের বেশি ১০ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে উৎপাদন ক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে আছে। অর্থাৎ এই ১০/১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন এবং সরবরাহের বিষয়টি পিডিবির কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা প্রণয়নে বিবেচনা করা যায়, এ চিন্তাই তাদের মাথায় আসেনি। এই অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্র সমূহ বেসরকারি খাতে অনেক বেশি সুবিধা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছিল এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য।
তিনি বলেন, অনুসন্ধানে দেখা যায় এ ধরনের বেসরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্র কখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি বা খুব কম সংখ্যক বিদ্যুৎ উৎপাদনে গেলেও এর পরিমাণ হল তাদের সক্ষমতার ১-২ শতাংশ । অর্থাৎ কেন্দ্রগুলো অধিকাংশ সময়েই উৎপাদনবিহীন অলস সময় পার করেছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে সরকারি হিসেবে ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সাধারণত ব্যবহƒত হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাপ প্রবাহের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি অলস বসে আছে। এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান করা হচ্ছে। যদিও তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার অনেক সময়ে জরুরি ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটি করা হয়নি বলে জানা যায়। আশঙ্কা হয়, এর অনেকগুলি হয়ত সচলই ছিল না।