Logo
Logo
×

জাতীয়

কায়সার কামালের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ব্যারিস্টার খোকনের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৮ পিএম

কায়সার কামালের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ব্যারিস্টার খোকনের

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের তীব্র সমালোচনা করেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। যিনি একই ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি। শৃঙ্খলা পরিপন্থি ভূমিকার কারণে শনিবার তাকে ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এমন খবরে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যারিস্টার খোকন। তিনি ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে অর্বাচীন বালক এবং সরকারের এজেন্ট হিসাবে আখ্যায়িত করেন। বলা হয়, তিনি একজন আত্মস্বীকৃত অপরাধী। নৈতিক স্খলনের দায়ে আইনজীবী ফোরামে তার সদস্যপদ থাকা উচিত না।

মাহবুব উদ্দিন খোকন তার বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ফোরামের তো গঠনতন্ত্রই নেই। সে কীভাবে বহিষ্কার করে? তার তো ক্ষমতাই নেই? যতক্ষণ গঠনতন্ত্র না হবে, ততক্ষণ কাউকে বহিষ্কার করা যাবে না। এটা আইনত কার্যকর নয়। আমি বিএনপি করছি, বিএনপি করব।’ 

ব্যারিস্টার খোকন বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা বার নির্বাচনে অংশ নিই। সেই নির্বাচনে আমরা ১৪টি পদের মধ্যে ১২টিতে জয়ী হতাম। কিন্তু কায়সার কামাল তিনবার সরকারের প্যানেলের পক্ষে কাজ করায় আমরা সভাপতিসহ চারটি পদে জয়ী হয়েছি। কিন্তু নির্বাচনের পর ভোট গণনা থেকে আমাদের এজেন্টদের কেন সরিয়ে নেওয়া হলো। এজেন্টদের সরিয়ে নেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগকে ওয়াকওভার দেওয়া। অর্থাৎ বার নির্বাচনে সরকারকে জেতানোর জন্যই ষড়যন্ত্র করেছেন কায়সার কামাল। এ ষড়যন্ত্রের মূলে ছিল ভোট গণনার সময় এজেন্টদের সরিয়ে নেওয়া। যদি এজেন্টদের সরিয়ে নেওয়া না হতো, তাহলে আমরা ১২টি পদে জয়ী হতাম। 

বার সভাপতি আরও বলেন, তারেক রহমান আমাদের প্যানেল ঘোষণা করেছেন। বিএনপির পার্টি অফিসে সবার উপস্থিতিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। তারেক রহমান তো বলেনি তোমরা ভোট গণনায় যেও না, সভাপতির দায়িত্ব নিও না। তাহলে দায়িত্ব নিও না, এ কথা বলার কায়সার কামাল কে? যদি আমরা ১২ পদে জয়ী হতাম, তাহলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের আন্দোলন শক্তিশালী করতে পারতাম। কিন্তু সরকারের সঙ্গে কায়সার কামালের আঁতাতের কারণে আমাদের ফোরাম পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হতে পারেনি। এজন্য সে দায়ী। অথচ বার নির্বাচনে আমরা সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। কায়সার কামালের ষড়যন্ত্রের কারণে সেই যুদ্ধে পুরোপুরি জয়ী হতে পারিনি। তিনি নির্বাচনের সময় উপস্থিত না থেকে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তারেক রহমানের ঘোষিত প্যানেলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

কায়সার কামালকে অর্বাচীন বালক হিসাবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, তিনি একজন আত্মস্বীকৃত অপরাধী। একজন আইনজীবীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। ওই আইনজীবী কায়সার কামালকে মারধর করে কলাবাগান থানা পুলিশে সোপর্দ করেন। মামলা হলে ওই মহিলার কাছে না যাওয়ার শর্তে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। কিন্তু পরে শর্ত ভঙ্গ করে কায়সার কামাল ওই আইনজীবীর স্ত্রীর সঙ্গে পরে যোগাযোগ রাখেন এবং বিয়ে করেন। কিন্তু কাবিন করেননি। তার ছয় মাসের বাচ্চাও আছে। এটা কায়সার কামালের তৃতীয় স্ত্রী। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সুপ্রিমকোর্টে ২৫-২৬শ নারী আইনজীবী রয়েছেন। ফলে তাদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

খোকন বলেন, এমন ব্যক্তি কীভাবে আইনজীবীদের নেতা হন। নৈতিক স্খলনের কারণে আইনজীবী ফোরাম থেকে তার সদস্যপদ থাকা উচিত নয়। সরকারের এই এজেন্টকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। আমি মনে করি, কায়সার কামালের ভূমিকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের তদন্ত করা উচিত।

ব্যারিস্টার খোকন বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ছিল টিএইচ খানের মতো আইনজীবীদের নেতৃত্বে। সেই সংগঠনকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম করেন কায়সার কামাল। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় কায়সার কামালদের ভূমিকা কী ছিল? কোথায় ছিলেন তিনি ওই সময়। 
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা ব্যারিস্টার কায়সার কামালের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অপরদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। ৬ ও ৭ মার্চ নির্বাচন শেষে ৯ মার্চ রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের। এরপর বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে ২৭ মার্চ চিঠি দিয়েছিল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের চিঠি পাওয়ার পরও অপর তিনজন দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেও ৪ এপ্রিল দায়িত্ব নেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। এটিকে চরম দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি উল্লেখ করে শনিবার তাকে ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম