Logo
Logo
×

জাতীয়

অষ্টমী স্নানে দেশজুড়ে পুণ্যার্থীর ঢল, প্রাণ গেল তিনজনের

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম

অষ্টমী স্নানে দেশজুড়ে পুণ্যার্থীর ঢল, প্রাণ গেল তিনজনের

দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুদিনব্যাপী অষ্টমী স্নানোৎসব মঙ্গলবার সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় বরিশালের বাবুগঞ্জ, বন্দরের নারায়ণগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পনিতে ডুবে ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পুরোহিতসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নামে। ঘাটগুলোতে পুরোহিতের কাছে মন্ত্রপাঠ করে স্নানে নেমে পড়েন তারা। স্নানোৎসবে জগতের কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা করেন পুণ্যার্থীরা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বরিশাল ও বাবুগঞ্জ : বরিশালের বাবুগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগরে পুণ্যস্নানে নেমে পানিতে ডুবে কলেজছাত্র মনদ্বীপ মণ্ডলের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার মাধবপাশা দুর্গাসাগরে হাজারো পুণ্যার্থীর স্নান চলাকালে তিনি নিখোঁজ হন। আধা ঘণ্টা পর নিথর দেহ ভেসে উঠলে তাকে শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মনদ্বীপকে মৃত ঘোষণা করেন। সাঁতার না জানলেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্নানে নেমে নিখোঁজ হন তিনি। মনদ্বীপ বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।

বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) : বন্দরের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে অংশ নিতে আসা রাজদীপ নামে এক শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রাজদীপ পরিবারের সঙ্গে গান্ধী ঘাট দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানে নেমে পানিতে তলিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দল শিশুটিকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাজদীপ চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার বেলতলী এলাকার উজ্জ্বল দাসের ছেলে।

বন্দরে সোমবার স্নানের লগ্ন শুরু হয় বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে। লগ্ন শুরুর পর স্নানার্থীদের ঢল নামে ব্রহ্মপুত্র নদে। ১৮টি স্নানঘাটে দলবেঁধে, সপরিবারে কেউবা এককভাবে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী স্নানে অংশ নেন।

রাজধানীর শাঁখারী বাজার থেকে স্নানে আসা কমলা রানী সরকার বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমীর স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাপ মোচনের জন্য আসা পুণ্যার্থীরা মঙ্গলবার ভোর ৪টা ২০ মিনিট থেকে বিকাল ৪টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত মূল সময়কে ধরে বাংলাদেশসহ ভারত, চীন ও নেপাল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঐতিহ্যবাহী এ স্নানে শামিল হন।

এ উপলক্ষ্যে গত ৩ দিন ধরে চিলমারীতে শুরু হয় নানা ধর্মের মানুষের আগমন। প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী ব্রহ্মপুত্র নদে বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষের স্নানের মধ্যদিয়ে সব পাপ মুছে ফেলার জন্য প্রার্থনা করেন তারা।

এ সময় এক পুরোহিতের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই পুরোহিতের নাম রশিক চাদ ঠাকুর। তিনি লালমনিরহাটের মোগলহাট-করনপুর এলাকার মৃত জঞ্জাল দেব নাথের ছেলে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ে রমনা সোনারীপাড়া মসজিদসংলগ্ন চায়ের দোকানে চা খেতে বসে বুকে ব্যথা অনুভব করেন পুরোহিত রশিক চাদ। চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকের ধারণা, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
 
এদিকে, উলিপুর পৌরসভা এলাকায় টোলের নামে পুণ্যার্থীদের অটোরিকশা থেকে জোর করে ১৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা দিতে না চাওয়ায় সেখানে যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে।

গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা মন্মথ এলাকার বাসিন্দা সুরোবালা জানান, কোনো ব্যবস্থা না থাকায় লোকজনের সামনেই কাপড় পালটাতে হচ্ছে। আমাদের খুবই লজ্জা লাগছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।

রংপুর তাজহাট থেকে স্নান উৎসবে আসা পুণ্যার্থী শ্রাবণী রানী বলেন, এবারে অষ্টমী স্নানের আনন্দটা একটু বেশি। তাই অনেক কষ্ট করে স্নান করতে এসেছি।

কিশোরগঞ্জ ও হোসেনপুর : কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্নানোৎসবে আসা পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। এ অষ্টমী স্নানোৎসবের আয়োজন করে হোসেনপুর উপজেলা ও পৌর শাখা পূজা উদ্যাপন পরিষদ।

এ উপলক্ষ্যে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকাসহ কুলেশ্বরী বাড়ি, কাচারি মাঠ ও রামপুর বাজারে বসে জমজমাট অষ্টমী মেলা।

ময়মনসিংহ : অষ্টমী স্নানকে ঘিরে ব্রহ্মপুত্র নদের বিশাল এলাকাজুড়ে পুণ্যাথীরা অবস্থান নেন। ব্রহ্মপুত্র নদের কয়েকটি ঘাট ছাড়াও জেলার বেগুনবাড়ি, বিদ্যাগঞ্জ, পিয়ারপুর, কালীরবাজার, ধলা, রৌহাসহ কয়েকটি স্থানের ব্রহ্মপুত্র নদে লাখো পুণ্যার্থী অষ্টমীর স্নান ও পূজা সম্পন্ন করেন।

এছাড়া, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, বাগেরহাটের চিতলমারী, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, জামালপুর ও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে অষ্টমী স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম