‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষাই বড় চ্যালেঞ্জ’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৪ পিএম
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার কম রিজার্ভ, মুদ্রা বিনিময় হার, কম বেসরকারি বিনিয়োগ এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কম হওয়া কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অন্যতম বাধা।
বৃহস্পতিবার সানেম ও বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘সাউথ এশিয়া এক্সপ্রিয়নসিং জবলেস ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারটি রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত হয়।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ফ্রানজিস্কা লিস্টোরেট ওহেনচেঞ্জ। আলোচক ছিলেন, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সিনিয়র ইকোনমিস্ট বানার্ড হ্যাভেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভিসি ড. রুবানা হক।
বক্তারা বলেন, এশিয়ার দেশগুলোতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তবে এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেসরকারি বিনিয়োগ কম। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এর মধ্যে আবার নারীর কর্মে অংশগ্রহণ আরও কম। এছাড়া বাংলাদেশে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। ফলে কৃষি থেকে অর্থনীতি শিল্পের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু অটোমেশন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে শ্রমিকেরা ঝুঁকিতে রয়েছে। এক্ষেত্রে কমে যেতে পারে কর্মসংস্থান। এ অবস্থায় শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ইনোভেশন এবং মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার সঙ্গে কর্মের বাজারের চাহিদার মধ্যে মিসম্যাচ আছে। শিক্ষা ব্যবস্থা কর্ম উপযোগী দক্ষতা নিশ্চিত করতে পারছে না। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা যেন কর্ম উপযোগী হয় সেটি নিশ্চত করতে হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বক্তারা বলেন, আগামীতে বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে রাজস্ব খাত এবং আর্থিক খাতের সংস্কার প্রয়োজন। এছাড়া দুর্নীতি উন্নয়নের অন্যতম সমস্যা। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং ডিজিটালাইজেশন করা গেলে দুর্নীতি কমে আসবে।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আছে। বেসরকারি বিনিয়োগ এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কম। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সংস্কার প্রয়োজন। কর আদায় বাড়াতে হবে। কম আয় দিয়ে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতসহ নাগরিকদের উন্নয়নে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না। তবে সরকার যেটুকু বিনিয়োগ করছে তার উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন। যেমন মেগা প্রকল্পগুলো সময়ের মধ্যে এবং নির্ধারিত ব্যয়ের মধ্যেই শেষ করা দরকার। এছাড়া বর্তমান সংকটময় সময়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় আগামী বাজেটে কার্যকর উদ্যোগের প্রতিফলন থাকতে হবে।
বানার্ড হ্যাভেন বলেন, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। পোশাক খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম খাত। কিন্তু অভ্যন্তরীর্ণ কর্মের বাজার সীমিত। শুধু কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাই বড় কথা নয়, সেই সঙ্গে মানসম্মত কর্মসংস্থান জরুরি। ২০২৬ সালে এলডিসি উত্তরণের পর পোশাক খাতে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। সেজন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং এক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করতে হবে। ঢাকার যানজট ও ঘনবসতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে।
ড. রুবানা হক বলেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। পোশাক খাতে যান্ত্রিকীরণের ফলে কর্মসংস্থান সীমিত হতে পারে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তবে বায়ারদের দিক থেকেও সহায়তার হাত বাড়াতে হবে। তারা যদি পোশাকের দাম বাড়িয়ে দেয় তাহলে এই শিল্প টেকসই হবে।
ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, দেশের উন্নয়নে দুর্নীতি অন্যতম বাধা। ডিজিটালাইজেশন করা হলে দুর্নীতি কমবে। আমাদের দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট শেষ হয়ে আসছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি দক্ষ কর্মী তৈরি