আলোচনাসভায় বক্তারা
কিডনি রোগ মহামারি রূপ নিতে পারে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১০:৫৮ পিএম
দেশে বর্তমানে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এ সংখ্যা প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার করে বাড়ছে। এ কারণে ভবিষ্যতে কিডনি রোগ মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক কিডনি দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এ আশঙ্কার কথা জানান। রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আলোচনাসভা, শোভাযাত্রা, লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কিডনি রোগ সচেতনতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা বলেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দুটি কিডনির প্রতিটিতে প্রায় ১০-১২ লাখ ছাকনি রয়েছে। জন্ম নেওয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে কিডনির ছাকনি বা ফিল্টার মেমব্রেন পুরোপুরি তৈরি হয়। কিডনিপ্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২০০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে। এর মধ্যে ১-৩ লিটার রক্তের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়। কোনো কারণে ফিল্টার বাধাপ্রাপ্ত হলে আকস্মিক বা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শিশু কিডনি রোগবিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে প্রতি ১০ লাখ শিশুর মধ্যে ১৫-৭৫ জন শিশু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে, যা দিনদিন বাড়ছে। বাংলাদেশে শিশু কিডনি রোগীর সঠিক তথ্য নেই। শিশু হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে হাসপাতালটিতে ভর্তি ৪৩ হাজার ৯৬৭টি শিশুর মধ্যে ১ হাজার ৫৯১টি শিশু কিডনি আক্রান্ত ছিল। এর হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তাদের মধ্যে নেফ্রোটিক সিনড্রোম ৫১ শতাংশ, আকস্মিক কিডনি বিকল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি বিকল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, কিডনির জন্মগত ত্রুটি ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২৩ সালে ভর্তি শিশুর কিডনি রোগীর মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।
কিডনিবিষয়ক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির মধ্যে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ও মোহাম্মদপুরের নবোদয় আবাসিক এলাকায় শোভাযাত্রা, পথচারীদের মধ্যে টি-শার্ট বিতরণ এবং ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যৌথ শোভাযাত্রা আয়োজন করে। আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, রোগটির ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণীয় সম্পর্কে সচেতন হলে এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করলে ৫০-৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা, পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত বা সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা, তীব্র মাত্রার ব্যথার ওষুধ পরিহার করা।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রিকশাচালকদের বিনামূল্যে কিডনি স্ক্রিনিং ও চিকিৎসাসেবা দিয়েছে ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন। আলোচনাসভায় কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-অর-রশীদ বলেন, এ রোগের প্রধান কারণ নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। দুর্ভাগ্যবশত রোগটির প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ থাকে না। যখন উপসর্গ দেখা দেয়, ততক্ষণে ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ কিডনি অকেজো হয়ে যায়।
কিডনি দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতাল ১৫ দিনব্যাপী বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করবে। হাসপাতালের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, ১৪ থেকে ২৮ মার্চ প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বিনামূল্যে রোগী দেখা হবে। বিশেষজ্ঞরাও বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন। কিডনি সম্পর্কিত ইউরিন আরই এবং সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হবে। এছাড়া মাত্র ১ হাজার টাকায় প্যাকেজে (আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, সিবিসি, ইউরিন আরই ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন) হেলথ চেকআপ করা হবে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়ে প্যাকেজে কিডনির পাথরের অপারেশন করা হবে। পাঁচজন হতদরিদ্র রোগীকে এক বছর পর্যন্ত ডায়ালাইসিস বিনামূল্যে করা হবে।