ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
বাসস
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে সঠিকভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, তা সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও এটি অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে রমজানকে সামনে রেখে যে কোনো ধরনের খাদ্য মজুতদারি ও ভেজালের বিরুদ্ধেও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী রোববার তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চার দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থাপনা নির্মাণ যেন বিল্ডিং কোড মেনে করা হয়, সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু যেখানে সিটি করপোরেশন আছে, সেখানেই নয়। সর্বজনীনভাবে প্রতিটি জায়গায়ই এ বিষয়টি মানতে হবে। অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা-এগুলো রেখেই নির্মাণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে দ্রুত ছুটে যাওয়ায় এবং জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় ঢাকা জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
তিন ফসলি আবাদি জমি বাড়িঘর বা শিল্পকারখানাসহ অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না মর্মে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তিনি মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের ফসলি জমিকে রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের উন্নয়ন করছে, পাশাপাশি দেশের মানুষের অধিকারও নিশ্চিত করা দরকার।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে। পৃথিবীতে এখন এমন দেশও রয়েছে, যেখানে মূল্যস্ফীতি ৪০ ভাগে উঠে গেছে। বাংলাদেশেও এর থেকে দূরে নয়, যদিও বাংলাদেশে এখনো মূল্যস্ফীতি ১০ ভাগের নিচে রয়েছে। কিন্তু তারপরও সমস্যা রয়ে গেছে। সব সময় লক্ষ রাখতে হবে আমাদের বাজার পরিস্থিতি কেমন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে রমজান মাস। এ সময় কিছু ব্যবসায়ী মজুতদারি করে, পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চায়। সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে, কেননা এটি আমাদের আশু করণীয় কাজ। তিনি বলেন, কোথাও যেন ভোক্তা কোনোরকম হয়রানির শিকার না হয়। আমাদের দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। আর এটা যে আমরা করতে পারি, সেটা কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করেছি। সেদিকে একটু নজর দেওয়া একান্তভাবে দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে সরবরাহ। সেটা নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। কেউ কেউ মজুতদারি করে। পণ্য পচিয়ে ফেলবে তবু বাজারে ছাড়বে না। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তিনি খাদ্যে ভেজাল দেওয়া প্রতিরোধেও জেলা প্রশাসকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রোজা এলেই এ সমস্যাগুলো বেশি পরিমাণে দেখা দেয়। এগুলোর দিকেও নজর দেওয়া একান্তভাবে দরকার।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াও বক্তব্য দেন। বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম এবং জেলা প্রশাসকদের পক্ষে চট্টগ্রামের ডিসি আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ও গাইবান্ধার ডিসি কাজী নাহিদ রসুল।
সমাজে কিশোর গ্যাং সমস্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে এবং পড়াশোনা করবে, সেই সময় এ সমস্যাটা দেখা দেয়। এটি কোভিড-১৯ চলার সময় বিস্তারলাভ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময়ই এটি সবচেয়ে বেশি সামনে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য এলাকাভিত্তিক নজরদারি বাড়াতে হবে। যারা লেখাপড়া করবে, তারা তা না করে কেন বিভিন্ন অসামাজিক কাজে জড়াবে? এ ব্যাপারে কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকদের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের নিয়ে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যেন কারও ছেলে-মেয়ে এ ধরনের কিশোর গ্যাং, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে না পারে। সেজন্য প্রতিটি পরিবারকে নিজের সন্তানসন্ততির প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারগুলোকে একটু সচেতন করতে হবে, শুধু গ্রেফতার করে বা ধরে লাভ নেই। সেক্ষেত্রে সেখানে থাকা বড় অপরাধীদের সংস্পর্শে এসে এরা আরও বড় কোনো ধরনের অপরাধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। এ কারণে গোড়া থেকেই আমাদের ধরতে হবে এবং পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।
তিনি মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে জনগণকে কর প্রদানে উৎসাহিত করা ও সচেতনতা সৃষ্টি, সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ, সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিকে উৎসাহিতকরণ, সেচ কাজে সোলার প্যানেলের ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ ও সমন্বিত বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলার এবং দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, যত বেশি ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তত বেশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকসহ তাদের মাঝে বিভিন্ন অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। এজন্য তিনি উপজেলাভিত্তিক মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্পগুলার দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নানারকম প্রতিযোগিতার আয়োজনে জেলা প্রশাসনকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
সরকারের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না এবং এগুলো কতটুকু স্থানীয় জনগণের কাজে আসবে, সে বিষয়ে প্রয়োজনে তাকে সরাসরি রিপোর্ট প্রদানের আহ্বান জানান তিনি। শুধু নামকা ওয়াস্তে প্রকল্প যেন না করা হয়, সে বিষয়ে তিনি সবাইকে পুনরায় সচেতন করেন।
তিনি বলেন, এই জনগণের অর্থেই তো আপনারাও চলেন, আর আমরা যারা এখন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী, তারাও চলি। কাজেই জনগণের সেবা করাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। তাদের সেবা করতে হবে। সেটা মাথায় রেখেই সব কাজ আমাদের হাতে নিতে হবে এবং সম্পন্ন করতে হবে। এ কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যও তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তাকে ভোট দিয়ে পুনরায় সরকার পরিচালনায় সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাবাহিতা অব্যাহত রাখার সুযোগ প্রদানের জন্য আবারও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি ১৯৭৫ সালের পর যে নির্বাচনগুলো প্রত্যক্ষ করেছি এবং অংশ নিয়েছি, এর মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবচেয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।