ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া অভিশ্রুতি বা বৃষ্টির লাশ হস্তান্তর করা হবে না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪০ পিএম
কুষ্টিয়ার বৃষ্টি খাতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এবং তার চাকরিক্ষেত্রে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। তবে তার জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং চাকরির জন্মবৃত্তান্তে নামের ক্ষেত্রে কোনোটিতে বৃষ্টি খাতুন আবার কোনোটিতে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামটা দেওয়া আছে। এসব নথিতে বাবার নামের জায়গায় শাবলুল আলম এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম লেখা। তবে চাকরির জন্মবৃত্তান্তে মায়ের নাম অপর্ণা শাস্ত্রী লেখা।
পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় মৃত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তার ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যান অভিশ্রুতি শাস্ত্রী।
অনলাইন পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের কাজ করতেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। তার মৃত্যুর পর লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় পরিচয়সংক্রান্ত এ জটিলতা সামনে আসে।
ঢাকার রমনা কালীমন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা শনিবার বলেন, মন্দিরের পক্ষ থেকে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং জেলা প্রশাসক বরাবর অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর পরিচয় নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তার সমাধানে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ৮ থেকে ৯ মাস ধরে মন্দিরে যাতায়াত করতেন, পূজা করতেন। সে সূত্রেই তার সঙ্গে পরিচয়। অভিশ্রুতি শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন, তার মা–বাবা ভারতের বেনারসে থাকতেন। তারা মারা যাওয়ায় দাদুর হাত ধরে ঘটনাচক্রে তিনি কুষ্টিয়ায় এসেছিলেন ছোটবেলায়। অভিশ্রুতির দাদু মারা গেলে একটি পরিবার তাকে দত্তক নিয়েছিল। তবে এ পরিবার মুসলিম না হিন্দু ছিল, তা তিনি বলেননি। অভিশ্রুতি মারা যাওয়ার পর তার মুসলিম বাবা লাশ নিতে ঢাকায় এসেছেন। তাই অধিকতর তদন্ত করে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল পরিচয় সামনে আনা জরুরি।
উৎপল সাহা আরও বলেন, পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর অভিশ্রুতি শাস্ত্রী যদি মুসলমান হন, তাহলে সেই ধর্মীয় রীতিতে, আর যদি হিন্দু হন, তাহলে সেই ধর্মীয় রীতিতে সৎকার করতে হবে।
অভিশ্রুতির আত্মীয় হারুন অর রশীদ বলেন, গতকাল রাত পর্যন্ত কথা ছিল বৃষ্টি খাতুনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে পরে পরিবারকে জানানো হয়, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না। বৃষ্টির বাবা লাশ নেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বসে আছেন। এই ইনস্টিটিউটের মর্গেই রাখা হয়েছে বৃষ্টির লাশ।
তিনি বলেন, বৃষ্টিকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল, সে হিন্দুধর্মের ছিল—এমন অনেক কথা এখন বলা হচ্ছে। তবে কখনোই তাকে দত্তক নেওয়া হয়নি। ডিএনএ পরীক্ষা হলে হবে, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
আরও পড়ুন: বেইলি রোডে আগুন: কাচ্চি ভাই কর্মকর্তাসহ আটক ৩
গতকাল শুক্রবার দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে সাদা কাপড়ে ঢেকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর লাশ নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে। তখন পর্যন্ত এই লাশের পরিচয় ছিল অজ্ঞাত, অর্থাৎ লাশের দাবিদার কেউ ছিলেন না। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা লাশের আঙুলের ছাপ নিয়ে লাশটি আবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে এবং পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে অভিশ্রুতির সহকর্মীরা নিশ্চিত হন লাশটি অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর।
অভিশ্রুতি অনলাইন পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে ছয় মাস কর্মরত ছিলেন। তিনি গত জানুয়ারি পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন বলে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের প্রধান প্রতিবেদক গোলাম রব্বানী গতকাল জানান। নতুন আরেকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে যোগ দেওয়ার কথা ছিল অভিশ্রুতির। নতুন কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া উপলক্ষে বৃহস্পতিবার অভিশ্রুতি তার বন্ধুদের সঙ্গে বেইলি রোডের ওই ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। সেখানে অগ্নিকাণ্ডে অন্যদের সঙ্গে অভিশ্রুতি মারা যান।