এখনো মাঝে-মধ্যেই মিয়ানমার থেকে ভেসে আসছে গুলির শব্দ। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকেও সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া থেকে ভারি গোলা বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনেছেন নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকার লোকজন। বৃহস্পতিবার রাতেও টেকনাফ সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন।
স্থানীয়রা বলছেন, চার-পাঁচ দিন আগে হঠাৎ অশান্ত হয়ে ওঠা বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত এখন অনেকটাই শান্ত। ফলে স্থানীয় যারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকে ফিরেও এসেছেন। হোয়াইক্যং, হ্নীলা এলাকার গ্রামগুলোর মানুষেরা নিজেদের বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত রোব-সোম ও মঙ্গলবার যে মাত্রায় গোলাগুলি হয়েছে, বুধবার থেকে সেই রকম শব্দ শোনা যাচ্ছে না। তবে মাঝে-মাঝেই গুলির শব্দ কিংবা ভারি গোলার বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকেও সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া থেকে ভারি গোলা বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শুনেছেন এলাকার লোকজন। নিজেদের অবস্থান জানান দিতেই হয়ত সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের ক্যাম্পগুলোর দখলকারীরা এমন আওয়াজ করছে।
তুমব্রুর বাসিন্দারা বলছেন, মিয়ানমার সীমান্তের ‘লেফট ক্যাম্প ও রাইট ক্যাম্প’ নামে দুটি বড় স্থাপনা পুনঃদখলে নিতে জান্তা বাহিনী পাল্টা হামলা চালাতে পারে। ফলে সেই আতঙ্কও রয়েছে তাদের মনে।
উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত এলাকায়ও থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। শুক্রবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত উখিয়ার থাইংখালি রহমতের বিল সীমান্তের ওপার থেকে গুলির শব্দ আসে বলে জানান স্থানীয় মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) কিছুটা গুলির শব্দ কম শোনা গেলেও আজ ভোর থেকে ওপারে পুনরায় চলছে গোলাগুলি। এপার থেকেই সেই শব্দ শোনা যাচ্ছে।
উখিয়ার পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে আবার গোলাগুলির শব্দ হচ্ছে বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি।
এমন পরিস্থিতিতে টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, সেদিকেও নজর রয়েছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় উদ্ধার করা মর্টারশেলের নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিজিবি ও সেনাবাহিনী। নয়াপাড়া সীমান্ত এলাকায় শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
তবে ওই বিস্ফোরণের শব্দের পরই সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা বিজিবির কক্সবাজার অঞ্চলের কর্মকর্তা লে. কর্নেল আজিজ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হচ্ছে। এর জেরে গুলি এপারে এসে পড়ছে।
মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দেশটির জান্তা বাহিনীর লড়াই চলছে। তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ মিলে জোট গঠন করে আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই করছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।
জোটের অন্যতম অংশ আরাকান আর্মি মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে। এ রাজ্যটিই বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে। সেখানে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। এর তিন বছর পর বিদ্রোহীদের তুমুল আক্রমণে এখন চাপের মুখে জান্তা সরকার।