জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসে পাঠাগার সেবা বৃদ্ধির প্রত্যয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৪ এএম
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস
আলোচনা ও বই পাঠ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে সোমবার ঢাকার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে 'জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস' উদযাপন করেছে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি'। অনুষ্ঠানে 'রিডিং সোসাইটি গঠনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা' বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর।
তিনি বলেন, আগে আমরা দেখতাম পাঠাগারে এসে পড়ুয়ারা বই পড়তেন। এখন সময় পালটে গেছে, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পাঠাগারের পরিচালনা প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনতে হবে। এখন পাঠাগারকে যেতে হবে পড়ুয়াদের কাছে। এক্ষেত্রে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে।
ফুড পাণ্ডাসহ বিভিন্ন অনলাইন বিপণন কেন্দ্র যেমন করে খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বাসায় পৌছে দিচ্ছে, তার আদলে পাঠাগারগুলোও ঘরে ঘরে বই নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন মিনার মনসুর।
এদিন সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরুল চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সালমা মমতাজ এবং কবি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এএফএম হায়াতুল্লাহ। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক।
ইমরুল চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বই পাঠ জরুরি। এখন দেখি পাঠাগারে অনেক পড়ুয়ারা আসছেন, ঠিকই, কিন্তু তারা সৃজনশীল বইয়ের চেয়ে বিসিএস এর প্রস্তুতির জন্যই পড়েন। এতে তথ্য জানা হয়, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হয় না। বিসিএসের জন্য হুট করে পড়া শুরু না ছোটবেলা থেকেই বই পাঠে অভ্যস্ত হতে হবে।
যাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ তারা পেশি শক্তির প্রয়োগ করেন উল্লেখ করে ইমরুল চৌধুরী বলেন, যারা সাংস্কৃতিক রুচির মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে তাদের আচরণ উন্নত হয়।
জেলার গণগ্রন্থাগারে বসেই ঢাকার জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সব বই পড়ার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগারে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক পাঠাগার করা হচ্ছে। সেটি চালু হলে বিভিন্ন জেলায় বসেই ই-বুক পড়ার সুযোগ থাকবে। যে কোনো জেলায় বসেই ঢাকার গণগ্রন্থাগারের বই পড়া যাবে।
পাঠাগারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা মানেই নিজের জীবনকে উন্নত করা উল্লেখ করে আবুবকর সিদ্দিক বলেন, আমরা ছোটবেলায় বই ধার করে পড়তাম। এই প্রজন্মের সুবিধা হচ্ছে তারা আর বই ধার করে পড়ার দরকার হয় না। এখন ডিভাইসের মাধ্যমেই বই পড়তে পারছে। ডিভাইসে হোক আর যেভাবেই হোক আমি মনে করি বই পড়াটাই জরুরি।
আলোচনা পর্বের পর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পাঠ, চিত্রাংকন এবং উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান করা হয়। পরে গান, নাচের পরিবেশনায় অংশ নেন শিল্পীরা।
গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস' হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে প্রতিবছরই ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে। জনগণকে গ্রন্থাগারমুখী করা, বই পড়ার অভ্যাস বাড়ানো এবং মননশীল সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পাঠাগারের ভূমিকাকে দৃঢ় করা লক্ষ্য নিয়ে বিগত বছরের মতো এবারও দেশব্যাপী দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন, বাংলা একাডেমি, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, কবি নজরুল ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি, বাংলাদেশ গ্রন্থাগারিক ও তথ্যায়নবিদ সমিতি, বেসরকারি গণগ্রন্থাগার সমিতি, বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পেশাজীবী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একযোগে দিবসটি পালন করছে।