যুগান্তর ২৫ বছরে পদার্পণ করছে জেনে আমি খুবই আনন্দিত। এই যুগ সন্ধিক্ষণে আমি যুগান্তরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, জানাচ্ছি শুভেচ্ছা। আমি খুবই আনন্দিত এ কারণে যে, যুগান্তরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বলা যায় তার জন্মলগ্ন থেকেই। চোখের সামনে এ দৈনিকটির শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। অর্জন করেছে সুনাম। সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন, দৈনিক ও সাপ্তাহিক কাগজ, অনলাইন নিউজ পোর্টালের ভিড়ে এবং প্রতিযোগিতার বাজারে যুগান্তর একটি প্রতিষ্ঠিত নাম। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্বপ্ন ছিল কাগজটিকে জনমানুষের করে গড়ে তোলা। তিনি আজ নেই, কিন্তু যুগান্তর সদম্ভে টিকে আছে। টিকে আছে বললে ভুল হবে। কাগজটি প্রতিদিন দেশের মানুষের কণ্ঠ হিসাবে কাজ করছে।
রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক খবরে ভরপুর থাকে যুগান্তর। মফস্বলের খবর খুবই চমকপ্রদ। রাজনৈতিকভাবে যুগান্তর বরাবর নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে-এটা পাঠকদের একটা বড় পাওয়া। সামাজিক ইস্যুগুলোতেও যুগান্তর উচ্চকণ্ঠ। সমাজের বর্জনীয় দিকগুলো যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে প্রকাশ করে থাকে কাগজটি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তীকালে উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকটের বর্ণনা, বিচার-বিশ্লেষণ যুগান্তর করে আসছে অবিরত। আমাদের ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, মূল্যস্ফীতি, বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা, দীর্ঘমেয়াদি ও অন্যান্য বৈদেশিক ঋণের উল্লম্ফন ইত্যাদি বিষয়ে যুগান্তরের প্রতিবেদনগুলো ছিল পরিসংখ্যানে ভরপুর। ছিল বিশেষজ্ঞদের মতামত, পাঠকদের মতামত-যা সমস্যা বোঝার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
যুগান্তরের রাজনৈতিক প্রতিবেদনগুলো হয় বস্তুনিষ্ঠ। এতে থাকে খবরের আড়ালের খবর। পাঠকরা নিয়মিত পান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নির্মোহ প্রতিবেদন। খেলার খবর, সংস্কৃতি অঙ্গনের খবর যথারীতি চিত্তাকর্ষক।
যুগান্তরে নিয়মিত প্রতিবেদন ছাপা হয় দুর্নীতির ওপর। এর থেকে আমরা খবর পাই দুর্নীতির আকার-প্রকার সম্পর্কে। বলা বাহুল্য, এ ইস্যুতে যুগান্তরকে আমরা পাই আপসহীন ভূমিকায়। এ জন্য যুগান্তরকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ।
যুগান্তর প্রতিষ্ঠার পর বিগত ২৪ বছরে দেশে ঘটেছে বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, রাজস্ব, বাজেটের আকৃতি বেড়েছে আশাতীতভাবে। বিগত ১৫ বছরে বিশেষ করে কৃষিতে ঘটেছে নীরব বিপ্লব। এসবের বিস্তারিত খবর আমরা প্রতিনিয়ত পেয়েছি যুগান্তরের মাধ্যমে।
যুগান্তরের সম্পাদকীয় ও বাতায়ন পাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্পাদকীয় মন্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার মতো। বিদেশের খবর যুগান্তরে থাকে প্রচুর। এসব পাঠ করলে আর বিদেশি কাগজ পড়তে হয় না। যুগান্তর বেসরকারি খাতকে খুবই গুরুত্ব দেয়। বেসরকারি খাতের সমস্যা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যার খবর পেতে যুগান্তর হতে পারে একটা আদর্শ সমাধান।
যুগান্তর ২৫ বছরে পদার্পণ করছে। এই ক্ষণে আমার মনে পড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত নুরুল ইসলামকে, যার আদর্শ পত্রিকাটি সমুন্নত রেখেছে। আমি যুগান্তরের ২৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে পত্রিকাটির সাংবাদিক, কর্মচারী এবং সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানাচ্ছি অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সেবা ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব ছিল না।
মুক্ত সাংবাদিকতায় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ও সমর্থনকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। আবারও যুগান্তরকে অভিনন্দন। যুগান্তর দীর্ঘজীবী হোক, পাঠকদের মনের মতো কাগজ হোক-এই প্রত্যাশাই করি।
ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতিক বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়