মানুষ সচেতন হলে অঙ্গ-সংযোজনের সমস্যা থাকবে না: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৩৭ পিএম
সদ্যপ্রয়াত নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কাছে মরণোত্তর দেহদান করেছেন।
বুধবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের প্লাস্টিনেশন ল্যাবে এ মরণোত্তর দেহ গ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এ ধরনের মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা এবং মরণোত্তর দেহ দানকারী সুভাষ চন্দ্র রায়ের বড় ছেলে তিতাস রায় এবং ছোট ছেলে পিয়াস রায়সহ পরিবারের সবার প্রতি এ ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নেত্রকোনার সরকারি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র রায় সচেতন নাগরিক ছিলেন। তাই তিনি মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন। তার দুটি কর্নিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে দুজনের চোখে প্রতিস্থাপন করে আলো ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার পরিবারে অন্য চার সদস্যও এর আগে মরণোত্তর দেহদান করেছেন। তাদের মতো মানুষ সচেতন হলে ভবিষ্যতে অঙ্গ-সংযোজনের সমস্যা থাকবে না। তিনি দেশের সব মানুষের প্রতি এরকম মহতী কাজে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।
১৯ জানুয়ারি সিভিয়ার অ্যানিমিয়া স্ট্রোক ইরোসিভ গ্যাসট্রাইটিস সমস্যার কারণে সুভাষ চন্দ্র রায়ের স্বজনরা তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করান। তিনি ২০ জানুয়ারি মারা যান।
সুভাষ চন্দ্র রায় ও তার পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য নিজের দুটি কর্নিয়া এবং আইবল দান করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সুভাষ চন্দ্র রায়ের প্রয়াত হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার দুটি কর্নিয়া সংরক্ষণ করেন।
২১ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে কর্নিয়া দুটির একটি নেত্রকোনার সুবের আলী (৬২) ও একটি পটুয়াখালীর জাহাঙ্গীর আলমের (৫২) ডান চোখে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি অফথালমোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শীষ রহমান সুবের আলীর এবং চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাস জাহাঙ্গীর আলমের চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করেন।
এনাটমি বিভাগে মরণোত্তর দেহদানকালে মরণোত্তর দেহ দানকারী সুভাষ চন্দ্র রায়ের বড় ছেলে তিতাস রায় ও ছোট ছেলে পিয়াস রায়সহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সুভাষ চন্দ্র রায়ের মরদেহটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগে সংরক্ষণ, শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের অনুমতিপত্রটি এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়। মরদেহের এমবামিং প্রক্রিয়ার শুরুর প্রাক্কালে এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানুর পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তারা ও এনাটমি বিভাগের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও রেসিডেন্টদের অংশগ্রহণে মরদেহের যথোচিত সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়।
সুভাষ চন্দ্র রায় ছিলেন একজন বাংলাদেশি স্থায়ী নাগরিক। তিনি মৃত্যুর পূর্বে বাংলাদেশ নোটারি পাবলিক কার্যালয় ঢাকায় স্বজ্ঞানে, কারো প্ররোচনা ছাড়াই পরিবারের উপস্থিতিতে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেন। সুভাষ চন্দ্র রায়ের পরিবারের অপর চার সদস্যও এর আগে মরণোত্তর দেহদান করেছেন।