কমানোর এক মাসের মাথায় ফের বাড়ছে হার্টের রিংয়ের দাম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
ফাইল ছবি
হৃদরোগের জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হার্টের রিংয়ের (স্ট্যান্ট) দাম কমানোর পর ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে এক মাসের মাথায় ফের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের দাবি আমলে নিয়ে ইউরোপীয় দেশভিত্তিক ২৪টি কোম্পানির হার্টের রিংয়ের দাম বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রিং সরবরাহকারীরাও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে করা রিট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা যুগান্তরকে জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে হার্টের রিংয়ের নতুন দাম বৃদ্ধির বিষয় জানানো হবে। এ ক্ষেত্রে রিংপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। যদিও বিষয়টি নিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা ব্যবসায়ী কোনো পক্ষই মুখ খুলতে চাইছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপীয় দেশভিত্তিক একাধিক ব্যবসায়ী রোববার যুগান্তরকে বলেন, রিংয়ের দাম কমানোর প্রতিবাদে ২৪ প্রতিষ্ঠানের রিং সরবরাহ বন্ধ রাখাসহ বৈষম্যমূলক দাম অবৈধ ঘোষণা করতে ঔষধ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ১১ ব্যবসায়ীর রিটে ১৯ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ফলে রিং সংকটে হার্টের রোগীরা বিপাকে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে ৮ জানুয়ারি ঔষধ প্রশাসন মৌখিক ঘোষণা দিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। এতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অনুমতি দেন। বৈঠকে উচ্চ আদালত থেকে রিট তুলে নেওয়াসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার পর অধিদপ্তর থেকে দাম বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পরে ১০ জানুয়ারি ব্যববসায়ীরা রিট প্রত্যাহার করে নেন। রিং ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, দাম নির্ধারণ কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরে এলে তার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সালাউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মুখপাত্র) নুরুল আলম যুগান্তরকে জানান, হৃদরোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, হৃদরোগ চিকিৎসক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে রিংয়ের দাম কমানো হয়েছে। সব হাসপাতালে রিংয়ের দামের তালিকা টানিয়ে দিতে বলা হয়েছে, যাতে রোগী ও স্বজনরা নতুন দাম সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে আবার নতুনভাবে দাম বাড়ানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অধিদপ্তরের অন্য কোনো কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা তা তিনি জানেন না।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১৩ ডিসেম্বর ২৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের হার্টের রিংয়ের দাম কমিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। রিংপ্রতি ২ থেকে ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম কমানো হয়। এ দাম ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। তবে নতুন দাম নির্ধারণের পর নিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে ওই দিন থেকে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্যান্ট (হার্টের রিং) সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ রেখে আসছিল আমদানিকারক ২৪ প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত ব্যবসায়ী।
তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোম্পানির ক্ষেত্রে ‘মার্কআপ ফর্মুলা’ অনুসরণ করা হলেও ইউরোপের ২৪ কোম্পানিকে এ তালিকায় রাখা হয়নি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের রিং সরবরাহকারী তিন প্রতিষ্ঠান এ আন্দোলনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে। হার্টের রিংয়ের বৈষম্যমূলক দাম অবৈধ ঘোষণা করতে হাইকোর্টে রিট করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর কয়েক দফা আলোচনা করে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে ঔষধ প্রশাসন।