জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আগামী মাসে এবং মার্চে রোজার আগে উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, কমিশন অনুমোদন দিলে আগামী সপ্তাহে সংরক্ষিত নারী সংসদ-সদস্য নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হতে পারে।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসবে। জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে।
সংরক্ষিত নারী আসনে তফশিল ঘোষণার বিষয়ে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সংসদ সচিবালয় থেকে সংসদ-সদস্যদের তালিকা, যারা ভোটার হবেন সেটা পেয়েছি। ভোটার তালিকা যেভাবে প্রকাশ করা হয়, সেভাবে সংসদে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রকাশ হওয়ার পর যদি কোনো আপত্তি না থাকে, সেটাই ভোটার তালিকা হবে। পরে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তফশিল ঘোষণা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩, জাতীয় পার্টি ১১, ওয়ার্কার্স পার্টি ১, জাসদ ১, কল্যাণ পার্টি ১ এবং স্বতন্ত্র ৬২ জন নির্বাচিত হন। আইন অনুযায়ী, প্রতি ছয়জন সংসদ-সদস্যের বিপরীতে একজন সংরক্ষিত নারী আসন নির্ধারিত হয়। ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যদের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের বণ্টন কীভাবে হবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি তো রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্তের বিষয়। আসন বণ্টন কীভাবে হবে এ ব্যাপারে কমিশনের তেমন কোনো বক্তব্য নেই। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেব, দলগুলো কোটা অনুযায়ী কতটি সংরক্ষিত আসন পাবে সে ব্যাপারে বলে দেওয়া হবে।
স্বতন্ত্র এমপিরা যদি জোট না করেন তাহলে সমাধান কীভাবে হবে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেব, স্বতন্ত্রদের নয়। স্বতন্ত্রদেরটা কীভাবে পাবে সেটি পরে দেখা যাবে। এই মুহূর্তে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না। কোনো দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোট করেছে এমন কোনো তথ্য এখনো কমিশনকে কেউ জানায়নি বলেও জানান তিনি।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন অনুযায়ী, ৫০টি সংরক্ষিত আসন আনুপাতিক হারে দল বা জোটগুলোর মধ্যে বণ্টন করা হয়। সাধারণভাবে ৬টি আসনের বিপরীতে কোনো দল বা জোট একটি সংরক্ষিত আসন পেয়ে থাকে। ৬টির কমবেশি ভগ্নাংশ হলে কীভাবে বণ্টন হবে তাও আইনে উল্লেখ রয়েছে। বিজয়ী দলগুলো নিজেরা এককভাবে যেমন আসন নিতে পারে, তেমনি চাইলে তারা জোটও করতে পারে। স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যদের নিয়েও কোনো দল পৃথক জোট করতে পারে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে অন্তর্ভুক্ত না হয়ে নিজেরাও স্বতন্ত্র নির্দলীয় জোট গঠন করতে পারে। এ ধরনের জোট গঠনের বিষয়টি সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ২১ কার্যদিবসের মধ্যে ইসিকে লিখিতভাবে জানানোর নিয়ম রয়েছে। আইনে আরও বলা আছে, ২১ কার্যদিবসের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটে যোগ দেননি এমন কোনো নির্দলীয় সদস্য থাকলে ইসি তাদের নাম নির্দলীয় সদস্য তালিকা নামে একটি স্বতন্ত্র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে এবং এই তালিকাভুক্ত সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নির্দলীয় জোট গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
উপজেলা নির্বাচন: অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচনযোগ্য উপজেলার তালিকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ইসিতে পাঠানো হয়েছে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে উপজেলা পরিষদের তফশিল ঘোষণা হতে পারে। রোজার আগে উপজেলা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সম্ভাবনা রয়েছে। সব উপজেলা নির্বাচনযোগ্য। কারণ আপনারা জানেন যে ২০১৮ সালের মার্চের দিকে শুরু হয়েছে। আইনে উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা আছে। সেই হিসাবে সব উপজেলা নির্বাচনযোগ্য হয়েছে। তিনি বলেন, রোজা ও পাবলিক পরীক্ষা বিবেচনায় ভোটের দিন নির্ধারণ করা হবে। প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন রোজার আগে শুরু হয়ে বাকিগুলো রমজানের পর হতে পারে। এবারও ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এখনো কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কোনো চিঠি পাইনি।