উত্তরাধিকার সূত্রে থাকছে তিন চ্যালেঞ্জ, আছে ঝুঁকিও
ড. জাহিদ হোসেন
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
২০২৪ সালে উত্তরাধিকার সূত্রে তিনটি চ্যালেঞ্জ থাকছে। এগুলো হলো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিঃবাণিজ্য খাতে ভারসাম্যহীনতা এবং আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা। মানে এসব চ্যালেঞ্জ ২০২৩ সাল থেকেই আছে এবং সেগুলো আগামী বছরও থাকবে। আমরা পলিসি কাঠামোতে কেতাবের বাইরে যে একটি বিষয় ২০২২ সাল থেকে নিজস্বভাবে এ তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যে পথে হেঁটেছি সেগুলো ২০২৪ সালেও যাচ্ছে। নিজস্ব পলিসির ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে কিছুটা সংশোধন করা হলেও তা বড় ধরনের কোনো সংশোধন ছিল না। অতীত অভিজ্ঞতায় যেটা দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিঃবাণিজ্য খাতে ভারসাম্যহীনতা এবং আর্থিক ভঙ্গুরতার ক্ষেত্রে নেওয়া নীতি কাজ করেনি বরং সমস্যাগুলো আরও জটিল করেছে।
২০২৪ সালের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কতটুকু হবে বা আদৌ হবে কিনা- সেটি নির্ভর করছে দুটি বিষয়ের ওপর। একটি হলো-বিশ্ব অর্থনীতিতে কি ঘটতে পারে এবং অন্যটি হলো অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় কি পরিবর্তন আসে তার ওপর। আন্তর্জাতিক পর্যায় কি ঘটতে পারে সে বিষয় বিশেষজ্ঞদের একটা ঐকমত্য হলো- বিশ্ব পরিস্থিতি এখন যে অবস্থায় আছে, সেটি যদি বহাল (সফট ল্যান্ডিং) থাকে তাহলে বড় ধরনের মন্দার আশঙ্কা নেই। যেটি ২০২৩ সালে বলা হয়েছিল মন্দা আসতে পারে। সেটি কেটে গেছে। ২০২৪ সালে হয়তো সেটি হবে না। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও কমবে, জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি কমবে। তবে যতটা কমার কথা ততটা হয়তো কমবে না। অর্থাৎ মন্দার দিকে যাবে না। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত যেভাবে সুদহার বাড়িয়েছিল সেটি হয়তো আর বাড়াবে না। যে পর্যায়ে আছে সেই পর্যায়েই থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে বলেছে, সুদের হার কমতে পারে যদি মূল্যস্ফীতি কমতে থাকে তাহলে। আইএমএফ প্রাক্কলন বলেছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতি বাড়তে পারে, যেটি ২০২৩ সালে ধীরগতি ছিল।
২০২৩ সালের শুরুতে যে বড় আশঙ্কা ছিল সেটি এখন নেই। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধ যদি ছড়িয়ে না পড়ে তাহলে আন্তর্জাতিক বাজার ভালো থাকবে। ডলারের দাম স্থিতিশীল থাকবে। আমাদের অর্থনীতিতে যেসব বিষয় প্রভাব ফেলে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডলারের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানির দাম বাড়া, সুদ হার বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়গুলো। আমাদের প্রয়োজন হলো এসব বিষয় নজর রাখা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আইএমএফের সঙ্গে যে অঙ্গীকার সরকার করেছে সেগুলোর বাস্তবায়ন করাটা জরুরি হবে। যেমন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, মুদ্রা বিনিময় হার ফ্লাক্সিবল করা, বাজেট ঘাটতি যা আছে তাই রাখা, আর্থিক খাতের ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা খুঁজে বের করা এবং ব্যাংক পরিচালনা পরিষদের বিষয়ে শুধরানোসহ বিভিন্ন অঙ্গীকার আছে। এসব নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
২০২৪ সালে দেশের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি আছে। এখানে ডাউনসাইড রিস্ক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি বিষয় রয়েছে। এগুলো হলো, যুদ্ধ পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে? যদি বেড়ে যায় তাহলে তেল, সার, গ্যাসসহ সব কিছু আমদানি পণ্যের দাম বাড়বে। এ ছাড়া স্যাংশনের একটা আশঙ্কা আছে। এটা একটা বড় ঝুঁকি। দ্বিতীয়ত, নীতি জড়তা। অর্থাৎ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার চলমান নীতি পরিবর্তনের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ধরনের জড়তা থেকে গেলে পলিসি রিফর্ম হবে না। আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা ঠিক হবে না। তৃতীয়ত, বিঘ্ন সৃষ্টিকারী রাজনীতি। এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলার পথে রাজনীতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এখানে ২০২৪ সালে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এ বাধা মোকাবিলা করা।
লেখক : সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ
বিশ্বব্যাংক, ঢাকা অফিস