প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ: ডিভাইস জালে গ্রেফতার আসামিও পাশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১৮ পিএম
ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার লালমনিরহাটের চাকরিপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম পাশ করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২০ ডিসেম্বর রাতে প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে নির্বাচিতদের তালিকায় রয়েছে ওই প্রার্থীর রোল নাম্বার।
অথচ ৮ ডিসেম্বর পরীক্ষার দিন সকালে ওই রোল নম্বরধারী গ্রেফতার হন। পরে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। এখনো তিনি জেলেই আছেন।
গ্রেফতার হওয়া ওই প্রার্থী রফিকুল ইসলামের রোল নম্বর ৪১২৩৫৯১। ওএমআর শিটে তার সেট কোড ছিল ‘যমুনা’। তিনি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রার্থী। বাবার নাম মো. শামসুল হুদা। তার পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল লালমনিরহাট সদর উপজেলার নেছারিয়া কামিল মাদরাসা। প্রকাশিত ফলাফলে এই প্রার্থীর রোল নাম্বার রয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষা নিয়ে বির্তক শেষ হচ্ছে না। কয়েক দফা পরীক্ষা পেছানো ও প্রশ্ন ফাঁসসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।
জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২৪ জনকে গ্রেফতারও করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া বহিষ্কার হন ৭০ জন। গ্রেফতারদের অনেকেই চাকরিপ্রার্থী। আবার কেউ জালিয়াতিতে সহযোগিতা করে গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের নামে মামলাও করেছে প্রশাসন।
এরই মধ্যে পরীক্ষার হলে ডিভাইস জালিয়াতির দায়ে গ্রেফতার ওই পরীক্ষার্থীর পাশ করার তথ্য পাওয়া গেল।
জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়ার পর ফলাফলে পাশ করা ওই চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে প্রবেশপত্র, ব্যবহৃত ডিভাইস, গ্রেফতারের দিনের ভিডিও আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া রফিকুলসহ ১৯ জনকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানের কার্যালয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে হাজির করা হয়। সেখানে তাদের প্রবেশপত্র, ব্যবহৃত ডিভাইস, মোবাইল ফোনসহ জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও দেখানো হয়।
ওই দিন ব্রিফিংয়ে আরপিএমপি কমিশনার জানান, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিটু এক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নপত্রের উত্তর বাইরে থেকে দেওয়ার চুক্তি করেছে একটি চক্র। এ তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে জালিয়াতির চেষ্টা করা চাকরিপ্রার্থী ও সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ রেজওয়ান হায়াতকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন যুগান্তরকে বলেন, জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির পাশ করার বিষয়ে আমি এখনো অবগত নই। তবে বিষয়টি খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।
৮ ডিসেম্বর রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮ জেলায় একযোগে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন চাকরিপ্রার্থী।
এদিকে অনিয়ম-জালিয়াতি হয়েছে অভিযোগ তুলে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কিছু প্রার্থী। হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণ, বৈরী আবহাওয়ার কারণে দূরপাল্লার গাড়ি না পাওয়া, প্রবেশপত্র ডাউনলোডের এসএমএস না পাওয়া, প্রবেশপত্রের কারণে হলে প্রবেশ করতে না পারা ও পরীাক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রশ্ন বাহিরে চলে যাওয়াসহ নানান দাবিতে প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন প্রার্থীদের একটি অংশ। এতে দেড় লাখেরও বেশি প্রার্থী অংশ নিতে পারেননি বলে দাবি করেছেন ওই প্রার্থীরা।
একই সঙ্গে ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতির অভিযোগ তুলে এ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
পাশাপাশি ৫৪ জন প্রার্থীর পক্ষে ফাতেমা আক্তার নামে একজন প্রার্থী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন। ওই রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফল প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে দুই মন্ত্রণালয়সহ ১৩ অধিদপ্তর-দপ্তরে নোটিশও পাঠান।
এরই মধ্যে ২০ ডিসেম্বর রাতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯ হাজার ৩৩৭ জন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তাদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে।