Logo
Logo
×

জাতীয়

নজরদারির ঘাটতিতে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও ভয়ংকর হতে পারে

Icon

জাহিদ হাসান

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:২৯ এএম

নজরদারির ঘাটতিতে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও ভয়ংকর হতে পারে

ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলো নানা উদ্যোগের কথা বললেও তাদের কৌশলগত নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। প্রকৃতির বিরূপ আচরণে সব ঋতুতেই মশার বিস্তার ঘটছে। ডেঙ্গু সংক্রমণের নির্ধারিত মৌসুম শেষ হওয়ার পরও প্রতিদিন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে নজরদারি বাড়িয়ে নতুন কর্ম পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে যথাযথভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আগামী বছরজুড়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও ভয়ংকর হতে পারে। প্রাণহানির শঙ্কাও বাড়তে পারে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার প্রজনন বেশি হওয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণও বেশি হয়। এবার বেশ কয়েক মাস আগে বর্ষা মৌসুম শেষ ও শীতকাল শুরু হওয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণ কিছুটা কমলেও গত বছরের তুলনায় বেশি। পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং দুজন মারা গেছেন।

রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সংশ্লিষ্টরা যুগান্তরকে জানান, দেশে ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬ জন। এ সময় মৃত্যু হয়েছিল ৮৬৮ জনের। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ১৬০ জনে। আর ১ হাজার ৬৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সোয়া গুণ। মৃত্যু বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১৯ হাজারের বেশি মানুষ। এবার একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৭১৬ জন। গত বছরের নভেম্বরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এবার নভেম্বরে ২৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর সেপ্টেম্বরে ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৩৯৬ জন মারা গেছেন। এ সংখ্যা ২৩ বছরের মধ্যে ১ মাসে সর্বোচ্চ।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. গোলাম ছারোয়ার যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গু বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এ বছর ৬৪ জেলাতেই রোগটি শনাক্ত হয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। ডেঙ্গু সংক্রমণ এখন আর মাস বা ঋতুতে সীমাবদ্ধ নেই। মূলত বৃষ্টি, তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ ও সঠিকভাবে মশা নিধন ব্যবস্থাপনার ঘাটতিতে এমন হচ্ছে। বিষাক্ত রাসায়নিক কীটনাশকের যথেচ্ছ প্রয়োগেও এডিস মশার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তারেও পরিবর্তন এসেছে। বিরূপ পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে, রক্ত শোষণ ও ডেঙ্গু ভাইরাস পরিবহণ মশা করতে পারে। বাসস্থান ও প্রজননস্থলেও মশা পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু মশা নিধনে নজরদারি ও সঠিকভাবে কর্মকৌশল প্রয়োগে এখনো ঘাটতি রয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে। ফলে মশার বিস্তার বাড়ছে। মশা নিধনে এখনই দেশব্যাপী সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, সঠিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় অনেক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা হওয়া উচিত।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন দাবি করেন, মশার বংশবিস্তারে আবহাওয়ার ভূমিকা রয়েছে। আইইডিসিআর থেকে ডেঙ্গুর সেরোটাইপ নিয়ে আমরা কাজ করছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগ নিয়ন্ত্রণ ও এন্টোমলজিক্যাল সার্ভে করছে। আগামীতে ভেক্টর কন্ট্রোলের বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শাসসুল কবির বলেন, সময়ে-অসময়ে বৃষ্টির জন্য মশার বংশবিস্তার ঘটছে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। নগরবাসীরও দায়িত্ব আছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম