আইনভঙ্গে ৩-৫ লাখ টাকা জরিমানা
ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুমতি ছাড়া নেওয়া যাবে না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১০ পিএম
ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। এ আইনের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য সুরক্ষা পাবে। এজন্য উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড গঠন করা হবে, যেখানে সবার তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য কেউ নিতে পারবে না। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সোমবার এ খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন বিকালে এ বিষয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর কেবিনেটে আইন অনুমোদন হতে সংবিধানে কোনো বাধা নেই। এটা সরকারের রুটিন কাজের একটি অংশ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রস্তুত করা ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩-এর যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকারি, বেসরকারি সব শিল্পকারখানার প্রক্রিয়া ও উদ্ভাবনী তথ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা প্রয়োজন। এ আইন চূড়ান্ত করার আগে একাধিক সভা, কর্মশালা, ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈঠকে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলার একটি মাস্টারপ্ল্যান করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যৌক্তিকভাবে মাস্টারপ্ল্যান করতে বলা হয়েছে এবং নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা তৈরির মনোভাব সৃষ্টি করতে জয়িতা ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনুমতি ছাড়া কারও ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত কেউ ব্যবহার করতে পারবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আর্থিক জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। বিদেশি কোম্পানি আইন না মানলে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার যে টার্নওভার আছে, এর পাঁচ শতাংশ জরিমানা হিসাবে আদায় করা যাবে।
মাহবুব হোসেন বলেন, তথ্য এখন সবচেয়ে বড় রিসোর্স। তথ্য ব্যবহারের ব্যবস্থাপনা কিংবা একজন ব্যক্তির তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার সম্মতির যে প্রয়োজন হয়, সেটি নিশ্চিত করতে উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই বোর্ড এসব বিষয় দেখাশোনা করবে। তিনি জানান, বোর্ডপ্রধানের পদ হবে চেয়ারম্যান, এতে চারজন সদস্য থাকবেন। উপাত্ত যারা সংগ্রহ করবেন, তাদের জন্য অনুসরণীয় কিছু নীতিমালা, বিধিবিধান থাকবে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বোর্ড এসব তৈরি করবে। সেসব মেনেই সবাইকে তথ্য সংগ্রহ ও বিতরণ করতে হবে। যারা তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়া করবে, তাদেরও বোর্ডে নিবন্ধিত হতে হবে। তথ্যের বিভিন্ন ধরনের শ্রেণিবিভাগ থাকবে। কিছু তথ্য ব্যক্তি অনুমতি দিলেও নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তথ্য-উপাত্ত প্রক্রিয়া করতে পারবে। বায়োমেট্রিক উপাত্তের মধ্যে ডিএনএ-এর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বেসরকারি গবেষণায় এ আইন বাধা হয়ে দাঁড়াবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেখানে তো কোনো ব্যক্তির তথ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয় না। আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। সেটি হলো- ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলার যেন একটি মাস্টারপ্ল্যান থাকে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যেন কাজটি সম্পন্ন হয়। এটা থাকলে আমাদের যে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ভূমি ব্যবহার খুবই যৌক্তিক হবে। যত্রতত্র যেন ঘরবাড়ি, শিল্প স্থাপন কিংবা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা না হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন। এতে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের একটা শৃঙ্খলা আসবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, সোমবার ছিল মন্ত্রিসভার এ বছরের অষ্টাদশ এবং সরকারের বর্তমান মেয়াদের ১২৫তম বৈঠক। এদিনের এজেন্ডায় ১২টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর নির্বাচনের আগে আর কেবিনেট হবে কি না, এ ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত হয়নি।