ভারতে অধ্যায়ন ও পেশাদার কোর্স সম্পন্নকারীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৮ এএম
বাংলাদেশ ভারতের সর্ম্পক বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে সস্মানের। দু’দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, মিডিয়া, সংস্কৃতি, আইন, আইটিসহ বিভিন্ন সেক্টরে ভারত সহযোগিতা করছে-করবে। ভারতের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন এবং পেশাদার কোর্সে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। অধ্যয়ন ও পেশাদার কোর্স সম্পন্নকারীরা বাংলাদেশে এসে স্ব স্ব স্থানে-প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশন ভবনে ভারতীয় কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা (আইটিইসি) সম্মেলন-২০২৩ অনুষ্ঠানে বক্তরা এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও আইটেক অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-আইএএবি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্টি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। আইটিইসি বাংলাদেশসহ ১৬০টিরও বেশি দেশ থেকে ১৬০,০০০ এরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ কর্মসূচিটি সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে আইটিইসি প্রাক্তন ছাত্ররা অধিষ্ঠিত হওয়ায় আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। আইইটিসি হচ্ছে ভারত সরকারের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম, যার লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের দক্ষতা এবং জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে উঁচুর-সম্মানের। ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নে সব সময় পাশে আছে-থাকবেও। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত দক্ষতা এবং জ্ঞান ভাগ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে লড়াই করেছে। স্বাধীনতা জয়ে ভারতীয় সৈন্য জীবন দিয়েছে-রক্ত দিয়েছে।
প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫ হাজারের বেশি তরুণ পেশাদার ভারতীয় প্রিমিয়ার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আইটিইসি প্রোগ্রামের অধীনে কোর্স সম্পন্ন করেছে। পাবলিক পলিসির কোর্স থেকে শুরু করে বিশেষায়িত কৃষি এবং শিল্প ডোমেন থেকে নতুন শক্তি এবং আধুনিক প্রযুক্তি পর্যন্ত বিস্তৃত। তাছাড়া ভারতের ভোপালে জাতীয় বিচার বিভাগীয় একাডেমিতে বাংলাদেশের বিচারক এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ভারতের বন্ধুপ্রতীম ও প্রতিবেশী দেশ স্বীকার করে প্রণয় কুমার ভার্মা আরও বলেন, দুটি দেশের সমৃদ্ধ ও উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা। সে কারণেই বাংলাদেশের শত শত কর্মী আইটেক কর্মসূচিতে যোগ দেয়। এসব কর্মীরা ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করছে। ভারত বাংলাদেশের পাশে সব সময় আছে ও থাকবে। এমন উদ্দ্যেশ্যগুলো দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারতের ঋণ আমরা কখনও ভুলি না-ভুলবো না। ভারত আমাদের বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার কর্মী আইটেক কর্মসূচির আওতায় অংশ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেছে। ভারত এ ধারা নিশ্চয় অব্যাহত রাখবে।
ড. রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ সক্রিয় রয়েছে, ভারতেও রয়েছে। জঙ্গিরা সহিংসতা সৃষ্টি করতে চায়। তবে এমন কোনো গোষ্ঠী যেন আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। নির্বাচন বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের দায়িত্ব। তবে বিএনপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ছড়াচ্ছে। তারা বাস পোড়াচ্ছে, জনগণের জীবন ও সম্পদ নষ্ট করছে। তবে সম্পদ ও জীবন রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। বাংলাদেশের নির্বাচনে কাকে জেতাবে, সেটা জনগণই ঠিক করবে। আমাদের আহ্বান থাকবে বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশ নেয়। তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে আমরা চাই।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভারতের বিশ্বজুড়ে সমাদৃত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের দেশের শিক্ষার্থী-পেশাদার ব্যক্তিবর্গ কোর্স সম্পন্ন করেছে। পশ্চিমা দেশে পড়াশোনার খরচ অনেক। তবে ভারতে সেই খরচ অনেক কম। অল্প টাকায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভারতে পড়াশোনা করে লাভবান হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসে দারুণ মিল রয়েছে। ভারতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী একই বছরে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এতে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। যা আমরা ধরে রাখতে চাই।
অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন, কোর্স সম্পন্নকারী আল নোমান, ফাতেমা তুজ জোহরা, ড. এস এম আসাদুজ্জামান, এলিজা চৌধুরী, ইকবাল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন- ভারতীয় হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি রাজেন্দ্র সিং। সবশেষ বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন ভারতের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।