পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে সরকার-মালিক-শ্রমিকের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক কাল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম
রাজধানীর মিরপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মঙ্গলবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ছবি-যুগান্তর
পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে সরকার-মালিক-শ্রমিক পক্ষের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে মালিক-শ্রমিক পক্ষ নিজেদের নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করবে।
গত বৈঠকে মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা এবং শ্রমিকরা ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা মজুরির প্রস্তাব দিয়েছিল। কালকের বৈঠকে উভয়পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারলে মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি সরকারের উচ্চমহলে পাঠানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর গার্মেন্ট অধ্যুষিত এলাকা মিরপুর, আশুলিয়া, সাভারে নতুন মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ ও কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি-মজুরি নির্ধারণে বোর্ডের দীর্ঘসূত্রতা শিল্পের জন্য অশনিসংকেত বয়ে আনবে। যদিও উদ্ভূত পরিস্থিতি মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ দাবি করেছে, একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে নতুন মজুরি ঘোষণার আগে শ্রমিকদের আন্দোলন করতে উসকানি দিচ্ছে।
নতুন মজুরি ঘোষণার আগে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। সরকার শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যে মজুরি নির্ধারণ করে দেবে, মালিকদের কষ্ট হলেও সে অনুযায়ী মজুরি দেবে। নতুন কাঠামো নভেম্বর মাসে ঘোষণা হবে, ডিসেম্বরে কার্যকর হবে এবং জানুয়ারি মাসে শ্রমিকরা বর্ধিত বেতন পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা কতখানি কষ্টে আছেন, তা আমরা ওয়াকিবহাল আছি। তাদের কষ্টে প্রতিটি উদ্যোক্তা সমব্যথী। শিল্প যত সমস্যাতেই থাকুক না কেন, শ্রমিকদের সাধ্য অনুযায়ী ভালো রাখা উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনা করতে সরকার গঠিত মজুরি বোর্ড কাজ করছে। এই মজুরি বোর্ড নতুন যে বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন, উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নেব। নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
তিনি আরও বলেন, একটি গোষ্ঠী শান্ত ও নিরীহ শ্রমিক উসকানি দিয়ে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। যদিও নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার আগে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। কয়েকদিন ধরে বহিরাগতদের উসকানিতে কিছু পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন, কারখানা ভাঙচুর করছেন, ফলে অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন, যা অনভিপ্রেত।
পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে ফারুক হাসান বলেন, আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়, ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়। কোনোরকম উসকানিতে আপনারা প্ররোচিত হবেন না। পোশাকশিল্পে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবেন না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফারুক হাসান বলেন, বেতন নিয়ে আলাপ-আলোচনা না হলে আন্দোলন যৌক্তিক ছিল। কিন্তু মজুরি বোর্ড তো বেতন কাঠামো নির্ধারণে কাজ করছে। তারপরও আন্দোলনের নামে কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে। এ অবস্থাতেও মালিকরা কারখানা চালু রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকরা বা বহিরাগতরা আন্দোলনের নামে ভাঙচুর চালালে বা নিরাপত্তার হুমকি থাকলে শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ বলেন, সাধারণ শ্রমিকরা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে না। বহিরাগতরা তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। গত কয়েকদিনে যারা রাস্তায় নামছে, তারা কারখানা শ্রমিক নয়। কিন্তু একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামতে উসকানি দিচ্ছে।
সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি একে আজাদ বলেন, নভেম্বরে মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হবে, ডিসেম্বরে কার্যকর এবং জানুয়ারি মাসে শ্রমিকরা নতুন কাঠামোয় বেতন পাবেন। কিন্তু নভেম্বর মাস শুরুর আগেই কারখানায় ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। এটা কারা করছে, এর পেছনে বহিরাগতরা জড়িত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্প পুলিশের সীমাবদ্ধতা আছে। তারা যথাযথভাবে শিল্পকে সুরক্ষা দিতে পারছে না।
এদিকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে গঠিত বোর্ডের সময়ক্ষেপণের কারণে শ্রমিকদের মাঝে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। চলমান শ্রমিক অসন্তোষকে নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে শক্তি প্রয়োগ করছে তাতে উত্তেজনা তীব্রতর হচ্ছে। খেটে খাওয়া নিরস্ত্র শ্রমিকদের অসন্তোষকে প্রশমিত করতে কৌশলী ভূমিকা গ্রহণ না করে দমন-পীড়ন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অপরদিকে মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ১১টি সংগঠন অংশ নেয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মালিকপক্ষ ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি এ সময়ে টেনে এনেছে, যার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব মালিকদের নিতে হবে। আইন মেনে ৬ মাসের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি ফয়সালা না করে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বিলম্ব করা হয়েছে। এখন মালিকরা ১০ হাজার ৪শ টাকা প্রস্তাব দেওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত শ্রমিকদের ক্ষোভকে উনকে দিয়েছে।