ডেঙ্গু মোকাবিলায় সপ্তাহব্যাপী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঘোষণা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৩৯ পিএম
দেশে চলমান ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ৬৪ জেলায় সপ্তাহব্যাপী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু-তে দেশব্যাপী ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহের এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সারা দেশে ১৮ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের কার্যক্রম চলছেই; কিন্তু মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব বড় প্রভাব ফেলছে। বাসা-বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার কথা আমরা বারবার বলে এসেছি; কিন্তু যেভাবে হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। ২০১৯ সালে যখন সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় তখনো অপরিকল্পিত নগরায়ন ভুগিয়েছে, এখনো আছে।
তিনি বলেন, বছরের শুরুতে মেয়রদের সঙ্গে বসেছি। প্রত্যেক মাসে সভা করছি। কিভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই উপায় বের করার চেষ্টা করছি, আমরা থেমে নেই। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো। তবে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের অবস্থার অবনতি হয়েছে এটা বলতেই হবে। কাজেই এটি প্রতিরোধই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।
এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা স্কাউটস, মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কাউন্সিলদের সঙ্গে বসেছি। এডিস মশা প্রতিরোধে অবশ্যই আমাদের বছরব্যাপী কার্যক্রম থাকতে হবে। এজন্য প্রত্যেকটি বাড়ির ছাদে গিয়ে গিয়ে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি কোথায় কোথায় পানি জমে থাকছে। দুই মাসে ড্রোনের মাধ্যমে কোন কোন বাসায় পানি জমে আছে সেগুলো শনাক্ত করা করা হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে। আমরা আমাদের কাজ করছি, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা সামাজিক বিপ্লব ছাড়া এর থেকে উত্তরণ কঠিন।
বিটিআই জালিয়াতির বিষয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, এই কীটনাশক পরিবেশবান্ধব। শুরুতে মাত্র ৫ টন আনার চেষ্টা করেছি আমরা। যে ঠিকাদার নিয়ে আসে সেখানে সিঙ্গাপুর লেখা ছিল। এতে সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। ভবিষ্যতে যাতে কোনোভাবে আর কাজ না পায় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বিটিআই আমরা আনব। এবার ঠিকাদার নয়, নিজেরাই আনব। ইতিমধ্যে তৈরিকৃত কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. একদাদুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের ধারণা ছিল ডেঙ্গু নির্দিষ্ট একটা সময়ে হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বছরের পুরো সময় জুড়েই প্রকোপ। গত ৮ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের তথ্য নিয়েছি। যেখানে আমরা দেখেছি ৭৬ ভাগ রোগী ঢাকার বাইরে থেকে আসা। এজন্য আমরা বছরব্যাপী কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।
এ সময় ডেঙ্গু চিকিৎসার জাতীয় নীতিমালার প্রধান অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমরা দেখছি বর্তমানে অধিকাংশ রোগী ঢাকার বাইরের। আজ সপ্তাহব্যাপী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জাতীয়ভাবে নিতে হচ্ছে। কারণ অতীতের সব রেকর্ড এবার ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে মৃত্যুতে পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। গত বছরই ছিল ভয়াবহ, সেখান থেকে এ বছর আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এর অন্যতম কারণ থেমে থেমে বৃষ্টি।
তারিকুল ইসলাম বলেন, সারা পৃথিবীতে ডেঙ্গুর বিস্তার এবার প্রায় কাছাকাছি। এর প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। আমরা হাসপাতালমুখী রোগী কমাতে চাই, তাহলে মশা মারার বিকল্প নেই। আগামী বছর যাতে আবারও এমন দুর্যোগে পড়তে না হয় সেজন্য এডিসের লার্ভা ধ্বংস করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে যেখানে এডিসের লার্ভা নেই সেখানেও ফগিং করা হচ্ছে, তাতে ফল কতটা আসবে? রোগী আধিক্য দেখে কার্যক্রমে জোর দিতে হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট সমন্বয়হীনতা। শুধু ডেঙ্গু নয়, অনেক কিছুই সমন্বিত কার্যক্রমের অভাবে সফল হচ্ছে না।