সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কন্যাশিশুর শিক্ষায় বিনিয়োগের বিকল্প নেই
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৪১ পিএম
বাংলাদেশে কন্যাশিশুদের অনেক অর্জন রয়েছে। তবে এখনো তাদের বাল্যবিয়েসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে। অনেক পরিবারে স্কুল না পেরোতেই মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে তাদের পেছনে বিনিয়োগ করা উচিত। সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কন্যাশিশুর শিক্ষায় বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল লেকশোর হাইটসে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ইউনিসেফ বাংলাদেশের মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য লতা মণ্ডল নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, অনেকেই ভাবেন মেয়েরা এটা পারবে না, ওটা করবে না। এভাবে ভাবা ঠিক নয়। মেয়েরা সবই পারে। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা না হয়ে বরং তাদের সাহায্য করা উচিত।
সভায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, কন্যাশিশুদের শিক্ষায় বিনিয়োগ হলো সেরা বিনিয়োগ। কারণ আজকের কন্যাশিশুই ভবিষ্যত প্রজন্মের হাল ধরবে। একটি সমাজ, একটি দেশ এবং আগামীর সুন্দর পৃথিবী নিশ্চিত করতে শিক্ষার বিকল্প নেই। আমরা সুন্দর একটি পৃথিবী গড়ার পথেই ছিলাম কিন্তু করোনাভাইরাসের সময় পৃথিবীজুড়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এ সময়ে বিশ্বজুড়ে এক দশমিক ছয় বিলিয়ন কন্যাশিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নারীশিক্ষার বিকল্প নেই।
সভায় দুটি প্যানেল ডিশকাশনের আয়োজন করা হয়। এতে কিশোর-তরুণদের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কেয়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রামেশ সিং বলেন, শিক্ষার হার বাড়লেও বাংলাদেশে আমরা দেখছি বাল্যবিয়ের প্রকোপ কমছে না। এ জায়গায় আমাদের কাজ করার আছে। যথাযথ নেটওয়ার্কিং তৈরির মাধ্যমে জোরালো আওয়াজ তুলতে হবে। তবেই আমরা সাফল্যের পথে যেতে পারব।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, মৌলিক অধিকারের জায়গায় যদি নারীরা পিছিয়ে থাকে তাহলে তারা কিভাবে সুন্দর ভবিষ্যত গড়বে। নারীর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতায়নের মাধ্যমেই সুন্দর ভবিষ্যৎ সম্ভব। বর্তমানে টেকনোলজির এ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলেও নারী ও কন্যাশিশুর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন, প্রয়োজন শিক্ষার।
এ বছর আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কন্যাশিশুর অধিকারের জন্য বিনিয়োগ: আমাদের নেতৃত্ব, আমাদের সমৃদ্ধি’।
সভায় সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর বেটসিয়া জোরিও বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কোভিড মহামারির সময়ে আমরা প্রচুর বাল্যবিয়ে দেখেছি, যা কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলেছে। আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময় কৈশরের সময়টুকু। এ সময় নানা মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। এই কঠিন সময়টা আমি নিজেও পার করেছি। এ সময়ের কিশোরীদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য, তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য বাল্যবিয়ে বন্ধের বিকল্প নেই।
মতবিনিময় সভায় কিশোর কিশোরী, উন্নয়ন সহযোগী ও অন্যান্য সামাজিক সংস্থার সদস্যরা কন্যাশিশুদের উন্নয়নে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও করণীয় সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেন। মেয়েদের নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ তৈরি, লিঙ্গভিত্তিক সমতা, কন্যাশিশুদের শিক্ষার অধিকার, পুষ্টি, আইনি সহায়তা, চিকিৎসার সুবিধা ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রসঙ্গে আলোচনা করেন তারা।