৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি: নিরাপত্তার দুর্বলতার সুযোগ নেন তিনজন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম
রাজধানীর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ ও শহিদুল ইসলাম এবং সিপাহি মো. নিয়ামত হাওলাদার মিলে গুদাম থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ সরিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে এমন ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই তিনজন স্বর্ণ চুরির দায় স্বীকার না করলেও পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হতে পেরেছে যে স্বর্ণ উধাওয়ের পেছনে তারা জড়িত। এ নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত তিনজনসহ আর যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের কাস্টমসের করা মামলায় গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ উত্তরা বিভাগ সূত্র।
সূত্র জানায়, ২ সেপ্টেম্বরের আগে ও পরে দুই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল, শাহেদ ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদারকে বিমানবন্দর এলাকায় একত্রে দেখা গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিচ্ছেন। তাদের কথাবার্তায় অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গেছে।
এসব বিষয় বিবেচনায় সাইদুল, শহিদুল ও নিয়ামতকে স্বর্ণ উধাওয়ের পেছনে তাদের হাত রয়েছে এবং তারাই সরিয়েছেন- এসব বিষয়ে সন্দেহ আরও বেড়েছে পুলিশের।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ চলমান রয়েছে। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা ভেরিফাই করা হচ্ছে। স্বর্ণগুলো গোডাউন থেকে সরিয়ে কোথায় বিক্রি করেছে বা কাদের কাছে রেখেছে, এসব বিষয় সম্পর্কে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। স্বর্ণ বেচাকেনার বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সেসব জায়গা থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ চলমান রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোর্শেদ আলম বলেন, মামলা করার পর থেকে এ ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হওয়ার পর যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
স্বর্ণ কিংবা স্বর্ণালংকার জব্দ করার পর লকার বা গুদামে রাখার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে মোর্শেদ আলম বলেন, গোডাউনে রাখা স্বর্ণালংকার তদারকির বা ম্যানেজমেন্টের বিষয়টি ছিল অত্যন্ত দুর্বল, যা আমি নিজে দেখেছি। মূল্যবান সম্পদ স্বর্ণ, যা লোকজনদের কাছ থেকে জব্দ করে অবহেলিত অবস্থায় রাখা ছিল।
মোর্শেদ আলম বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বর্ণ জব্দ করার তিন দিন পরেই বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বর্ণ জমা দিতে পারে। কিন্তু মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে- ২০২০ সাল থেকে স্বর্ণালংকার বা স্বর্ণ সেখানে রক্ষিত ছিল। যথাযথ প্রক্রিয়া তারা অনুসরণ করেননি এবং অন্য আরেকটি জায়গা ছিল স্বর্ণগুলো রাখার জন্য, সেখানেও রাখা হয়নি। নিরাপত্তার দুর্বলতার জন্যই এমনটা হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টমসের গুদাম থেকে স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার চুরির অভিযোগে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে চুরির মামলা করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ চুরির ঘটনায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা করেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে গোডাউন থেকে স্বর্ণ চুরির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন কাস্টমসের গুদাম কর্মকর্তা মাসুদ রানা। এ ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গুদামে কর্মরত এ, বি, সি এবং ডি—এই চার শিফটের সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুম রানা, সাইদুল ইসলাম শাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আকরাম শেখ ও সিপাহি মো. রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মো. আফজাল হোসেন, মো. নিয়ামত হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো সদুত্তর পাননি কর্মকর্তারা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় আটক করা ৩৮৯টি ডিএম থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ লকার ভাঙা আলমারিতে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনাটি ২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১৫ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময়ে কে বা কারা গোডাউন থেকে স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছে।
মামলার পর থেকেই চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চার সিপাহিকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে উত্তরা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিমানবন্দর থানা পুলিশ।