Logo
Logo
×

জাতীয়

তেল সরবরাহ করা হয়নি একাংশের ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রোল পাম্প

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩৫ পিএম

তেল সরবরাহ করা হয়নি একাংশের ধর্মঘটে বন্ধ পেট্রোল পাম্প

পেট্রোল পাম্প মালিকদের একাংশের ধর্মঘটে রাজধানীসহ সারা দেশে রোববার অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প বন্ধ ছিল। যেসব পাম্প খোলা আছে, তেলের ডিপো বন্ধ থাকায় সেগুলোও তেল সংকটে পড়ে। ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে যে পাম্পগুলো খোলা আছে, সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প ঘুরে তেল পাননি অনেক গাড়িচালক। বাড্ডায় পাম্পগুলো বন্ধ দেখা গেছে। যেসব পাম্প খোলা দেখা গেছে, সেগুলো ডিজেল দিলেও অকটেন বিক্রি করেনি। অকটেন না থাকায় বিপাকে পড়েছে দামি প্রাইভেট কার ও বিলাসবহুল গাড়ি। মিরপুর-১৪-এর দিগন্ত ফিলিং স্টেশনে শুধু ডিজেল দেওয়া হলেও রিজার্ভে তেল না থাকায় অকটেন দেওয়া বন্ধ ছিল।

অকটেন না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন রাশেদ নামে ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। তিনি বলেন, আমার এই গাড়িটা সব সময় অকটেনেই চালাই। কখনো পেট্রোল নিই না। বাড্ডা ফিলিং স্টেশনের এক কর্মী বলেন, পদ্মা ডিপো থেকে আমরা তেল আনি। রোববার সকালে আমাদের কয়েকটি গাড়ি গেছে। ডিপোর গেট বন্ধ থাকায় ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে আমাদের যা তেল ছিল, সব বিক্রি করে দিয়েছি। 

যেসব পেট্রোল পাম্প খোলা ছিল সেখানে দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ফিলিং স্টেশনে ভিড় জমাচ্ছেন চালকরা। প্রয়োজনমতো তেল পাচ্ছেন না তারা। জেবেল নামে এক চাকরিজীবী বলেন, মালিবাগ অফিস থেকে বের হয়ে রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল কয়েক জায়গায় গিয়েছি কোথাও তেল পাচ্ছি না।

পেট্রোল পাম্প মালিকদের দাবি, ডিজেলের ২ ভাগ, পেট্রোলের ৩ ভাগ ও অকটেনের ৪ ভাগ কমিশন বাড়িয়ে সাড়ে ৭ ভাগ করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের শিল্প থেকে বাদ দিয়ে কমিশন এজেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া পুরাতন ট্যাংক লরি অবসরের সময় ২৫ বছর থেকে বাড়াতে হবে। এই তিন দাবিতে তারা ধর্মঘটের ডাক দেয়।

শনিবার রাতে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হকের নেতৃত্বে থাকা একাংশ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। আর পেট্রোল পাম্প মালিকদের অন্য একটি অংশ ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। 

এর মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় রোববার তাদের কমিশন এজেন্ট হিসাবে গেজেট প্রকাশ করেছে। এ গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে তেল ব্যবসায়ীদের করা তিন দফা দাবির মধ্যে একটি পূরণ করা হয়েছে। বাকি দুটি দাবি পূরণের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাকি দুই দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধ রেখেছেন তারা। এতে অনেক পাম্পে সকাল থেকে বিক্রি হলেও দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তেল শেষ হয়ে যায়। ফলে বন্ধ আছে বিক্রি। আজ এ ধর্মঘট চললে সব পাম্প বন্ধ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, তেলের মজুত আছে; কিন্তু মানুষ তড়িঘড়ি করে তেল কিনছে বিধায় সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে রোববার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, সব পেট্রোল পাম্প খোলা আছে; কিন্তু তেলের ডিপো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ মুহূর্তে ধর্মঘট প্রত্যাহার না করলে দেশে তেলের সংকট দেখা দেবে। যারা ধর্মঘট ডেকেছে, তাদের দাবি যৌক্তিক। তবে সরকারকে সময় না দিয়ে ধর্মঘট ডেকে মানুষকে বিপদে ফেলা অযৌক্তিক। তিনি বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিশনের দাবি ও লাইসেন্সের ঝামেলা মেটানো হবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী। তাই মন্ত্রণালয়কে সময় দেওয়া উচিত।

পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির একাংশের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান রতন বলেন, এক পক্ষ দালালি করছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা হাতেগোনা। তারা পাম্প খোলা রাখলেও লাভ নেই। তেল উত্তোলন তো বন্ধ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

খুলনা : খুলনায় ডিপোগুলো থেকে তেল না পেয়ে ট্যাংক লরি নিয়ে চালকদের বেকার বসে থাকতে দেখা গেছে। এদিকে তেল সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকায় রোববার রাত থেকেই খুলনার পাম্পগুলোয় ভিড় বাড়তে থাকে। খুলনার নতুন রাস্তার মোড়ের এলেনা পেট্রোল পাম্পের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। খুলনা নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড় এলাকায় সিটি করপোরেশনের পেট্রোল পাম্পেও দীর্ঘ লাইন ছিল মধ্যরাত পর্যন্ত। রোববার সকালে খালিশপুর, দৌলতপুর, বয়রা, ফুলবাড়ী গেটের কয়েকটি পেট্রোল পাম্প ঘুরে দেখা যায় সেখানে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। খালিশপুরের ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা থেকে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে না। সেখানে কয়েক শ ট্যাংক-লরি দাঁড়িয়ে আছে।

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে ভৈরবের যমুনা, মেঘনা ও পদ্মা ডিপো থেকে কোনো তেল সরবরাহ হয়নি। ভৈরবের তিনটি তেল ডিপো থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলায় দুই কোটি লিটার তেল সরবরাহ করা হয়। যমুনা ডিপোর সুপারিনটেন্ট মো. মতিউর রহমান বলেন, ধর্মঘটের কারণে ভৈরবের ডিপো থেকে কোনো জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়নি। 

হাকিমপুর (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের হিলিতে নয়ন কুন্ডু নামে তেল পাম্পের এক মালিক বলেন, যদি দাবি বাস্তবায়ন না হয়, তবে এই ধর্মঘট চলবেই। মোটরসাইকেলে তেল নিতে আসা আশরাফ হোসেন বলেন, আমি আমার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। পথিমধ্যে আমার গাড়ির তেল শেষ হয়েছে। পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। 

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) : রোববার পার্বতীপুর ওয়েল হেড ডিপোর সামনে মালিক গ্রুপের নেতারা অবস্থান নিয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি তুলে ধরেন। এ সময় বক্তব্য দেন রংপুর বিভাগীয় ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল হক ভুইয়া, দিনাজপুর পেট্রোল পাম্প মালিক গ্রপের সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম