ফেসবুকে অশ্লীল ভিডিও: কলেজছাত্রীর মামলায় যুবকের বিরুদ্ধে চার্জশিট শিগগিরই
সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম
মোবাইল ফোনে নিজের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রেখেছিলেন নীলফামারী ডিমলার ১৯ বছর বয়সি মোহনা আক্তার (ছদ্মনাম)। কৌশলে একই এলাকার ২২ বছর বয়সি যুবক অমল চন্দ্র রায় তার নিজের মোবাইল ফোনে এসব ছবি ও ভিডিও স্থানান্তর করে। ওইসব দেখিয়ে মোহনাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা চালায় অমল। কিন্তু রাজি হননি মোহনা। এ কারণে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সঙ্গে নানা আপত্তিজনক কথাবার্তা জুড়ে দেয়। অমলের বিরুদ্ধে মোহনা অভিযোগ করলেও নিজের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওর কথা পুলিশের কাছে অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে অমলও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার মোবাইল ফোন থেকে এসব ছবি ও ভিডিও আপলোড করা হয়নি। অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, ওই ছবি এবং ভিডিও মোহনারই। আর অসৎ উদ্দেশে অমলই এসব ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শিগগিরই অমলের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেবে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। ইতোমধ্যেই চার্জশিট প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে সিআইডি সদর দপ্তর। সিআইডির সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গত বছরের ৬ মে ডিমলা থানায় করা মামলার এজাহারে মোহনা উল্লেখ করেন, তিনি এইচএসসি পাশ করে অনার্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাড়িতে অবস্থানকালে তার বন্ধু-বান্ধবীরা তাকে মোবাইল ফোনে জানায় ‘সেক্সি মেয়ে’ নামে একটি ফেসবুক আইডি’র প্রোফাইলে তার ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন অশ্লীল পোস্ট দেওয়া হয়েছে। পরে তার মোবাইল ফোন থেকে ফেসবুকে ঢুকে বিষয়টির সত্যতা পান। কে বা কারা ‘সেক্সি মেয়ে’ নামে ফেসবুক আইডির প্রোফাইলে তার ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন অশ্লীল এবং নগ্ন ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে নানা রকম বাজে মন্তব্যও রয়েছে।
এজাহারে মোহনা বলেন, আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও দেখার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নীলফামারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। পুলিশ তদন্ত করে দেখতে পায়, অমল চন্দ্র রায় নামক একজন ব্যক্তি এ ঘটনায় জড়িত। পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে পুলিশ অমলকে গ্রেফতার করে। অমল এই মুহূর্তে জামিনে আছেন।
সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মোহনা আক্তার ও অমল চন্দ্র রায়ের বাড়ি ডিমলার একই এলাকায়। তারা ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও অমলের বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও মোহনা আক্তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। এই সুবাদে কৌশলে মোহনার মোবাইল থেকে অমল তার মোবাইলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও স্থানান্তর করেন। পরে মোহনাকে অমল কুপ্রস্তাব দেন। এতে সাড়া না পাওয়ায় ভুয়া ফেসবুক আইডি তৈরি করেন।
সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম বলেন, প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে থানা পুলিশ। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে এজাহারের কপি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের প্রাথমিক তদন্ত ও প্রযুক্তি পরীক্ষায় ঘটনাটি সত্য বলে মনে হলে মামলাটি সিআইডির মাধ্যমে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। রেজাউল করিম বলেন, আমি তদন্তভার পাওয়ার পর বাদী এবং বিবাদী দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করি।
বাদী জানান, তিন কখনো নিজের নগ্ন ছবি তোলেননি। ভিডিও করেননি। তাই তার মোবাইল থেকে কোথাও এসব যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আসামিও জানান, তিনি এসব কাজে জড়িত না। পরে বাদীর ছবি এবং বিবাদীর মোবাইল ফোনসহ একাধিক আলামত সিআইডির পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে, ওইসব ছবি এবং ভিডিও মোহনারই। আর অমলের ফোন নম্বর থেকেই ফেক আইডি খুলে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ীই চার্জশিট প্রতিবেদন তৈরি করে সদর দপ্তরের অনুমোদন চাওয়া হয়। ইতোমধ্যেই অনুমোদন পাওয়া গেছে। শিগগিরই নীলফামারীর আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।