Logo
Logo
×

জাতীয়

মিয়ানমারে নিষ্ঠুরতার রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন রোহিঙ্গারা

Icon

মাসুদ করিম, কুতুপালং ক্যাম্প থেকে

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৪:৩০ পিএম

মিয়ানমারে নিষ্ঠুরতার রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন রোহিঙ্গারা

আব্দুল জব্বার। বয়স ৬৮ বছর। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তার ছেলেকে হত্যা করে। প্রথমে গুলি করে তারপর মাথার দু'পাশে পেরেক ঠুকে দেয়। তখন তারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। 

এর চেয়ে নিষ্ঠুরতার কাহিনী শোনালেন ৫৭ বছর বয়সি শফিউর রহমান। তার বাবা ও ছেলেকে হত্যা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ফায়জুল হকের বয়স ৪৪ বছর। তিনি ৬ বছর আগে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার বীভৎস বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ও দাইমা, শ্বাশুড়িসহ সাতজনকে বার্মিজ আর্মি হত্যা করেছে। পরিবারের বাকি চারজনকে নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিই। 

ফায়জুল হক বলেন, আমি পরিবারশূন্য, যারা এখনো অবশিষ্ট আছে তাদের নিয়ে ফিরে যেতে চাই। এটাই জীবনের শেষ চাওয়া। 

অবর্ণনীয় নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার নূরজাহান (৪০) বলেন, সেদিন যেভাবে আমাদের কেটেছে, মেরেছে তা এখনো চোখে ভাসে। এখন নিরাপত্তা না দিলে আমরা কিভাবে যেতে পারি- এ প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, সভ্য দুনিয়া যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে তাহলে আমরা যেতে চাই। শামসুন্নাহার, আমেনা বেগম, রাজিয়া বেগম প্রায় একই কথা বলেন। 

নিহত রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহর স্থলাভিষিক্ত আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রোহিঙ্গার সংখ্যা লাখে লাখে বাড়ছে। এভাবে চললে কয়েক বছরে রোহিঙ্গার সংখ্যা দ্বিগুণ হতে বাধ্য। 

হিউম্যান রাইটসের নেতা ডা. জোবায়ের বলেন, বাংলাদেশে স্থান সংকুলান হবে না। এ কারণে আমরা আমাদের নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে চাই। এজন্য আন্তর্জাতিক মহলকে বার্মার ওপর চাপ দিতে হবে। 

রোহিঙ্গা নেতা সাইয়েদ উল্লাহ বলেন, আমাদের রাখাইন রাজ্যে আমাদের নিজ বাড়িতে ফেরত পাঠাতে হবে। কোনো মডেল ভিলেজে পাঠালে হবে না। 

এদিকে ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার দিনকে জেনোসাইড দিবস হিসেবে পালন করে রোহিঙ্গারা। এ উপলক্ষে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা সমাবেশ করে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি করেন। 

মিয়ানমারের একটি সীমান্ত চৌকিতে হামলার অজুহাতে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থি বৌদ্ধরা নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন শুরু করলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢল বাংলাদেশে প্রবেশ করে। 

বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থিত দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ভাসানচরে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক জান্তা আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে থাকায় পাইলট প্রকল্পের অধীনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য কিছুটা আগ্রহ দেখাচ্ছে। 

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহায়তার মাধ্যমে পদক্ষেপের চিন্তা করা হলেও পশ্চিমারা মনে করে, মিয়ানমারে সামরিক জান্তার পতন হলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান সহজ হবে। যদিও অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আগ্রহ দেখায়নি। তাছাড়া চীন ও রাশিয়ার ভেটোর আশঙ্কায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশন রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত নিষ্ঠুরতাকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিজে) রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) দমন-পীড়নে অংশ নেওয়া মিয়ানমারের সেনা ও বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা মামলার কাজও চলছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম