বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু। এর প্রভাবে কয়েক দিন ধরে হচ্ছে টানা বৃষ্টি। কোথাও মুষলধারে আবার কোথাও থেমে থেমে। বৃষ্টির কারণে ইতোপূর্বে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে।
বৃষ্টির এমন প্রবণতা প্রায় সারা দেশেই দেখা যাচ্ছে। রোববারও হয়নি এর ব্যতিক্রম। আগের রাতের ধারাবাহিকতায় এদিন সকাল থেকে দেশের অন্য স্থানের মতো ঢাকায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এতে ঘর থেকে বের হতে পারেননি অনেকেই।
আবার কাজের প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন তারা পড়েন অনেক ভোগান্তিতে। রাস্তায় যানবাহন ছিল কম। তাই বৃষ্টিতে আটকা পড়ে অনেককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার পাশে অপেক্ষা করতে হয়। সময়ের অভাবে আবার কেউ ভিজে কিংবা ছাতা মাথায় করে গেছে কাজে।
স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি ভাড়া গুণেও অনেককে যেতে হয়েছে গন্তব্যে। এদিন বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ ছিল তুলনামূলক বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) থেকে অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো সুখবর নেই। চলতি মাসের বাকি আড়াই সপ্তাহই বৃষ্টি থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেবল ১৭ থেকে ২০ আগস্ট এই চার দিন বৃষ্টির প্রবণতা কমতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের ওপর বর্তমানে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় আছে। এর প্রভাবেই দেশের ভেতরে ও বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যমান মেঘমেদুর অবস্থা বিরাজমান থাকতে পারে। এরপর ২০ আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টি কমার পাশাপাশি তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এরপর মাসের শেষ পর্যন্ত বিদ্যমান বৃষ্টি পরিস্থিতি ফের বিরাজ করতে পারে।
বাংলার কৃষিপঞ্জি অনুযায়ী বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ধানসহ শস্য আছে মাঠে। কোথাও ধানগাছ খানিকটা বড় হয়েছে। আবার কোথাও ধান কাটার প্রক্রিয়া বা প্রস্তুতি চলছে। সামনে আছে রোপা আমন বা এ জাতীয় ফসলের মাঠ তৈরির প্রস্তুতি। এতে গ্রামীণ জনপদের জন্য এই বৃষ্টির বেশ প্রয়োজন।
ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। রোববারই পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় ফিরেছেন কৃষক আবুল কালাম খান। তিনি বলেন, গ্রামীণ জনপদের জন্য এই বৃষ্টি খুবই উপকারী। চলাচলের জন্য হয়তো শহরাঞ্চলে এই বৃষ্টি নিয়ে উষ্মা থাকতে পারে। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহর নেয়ামত। এটা কতবড় নেয়ামত তা কেবল কৃষকরাই বলতে পারবেন।
দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী নামে ঢাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, শ্রাবণের শেষে এসে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে আষাঢ়ে তার দেখা মেলেনি। এমনকি রোববার শ্রাবণের ২৯ তারিখ যাচ্ছে। এমন বৃষ্টি তো মাসজুড়েই থাকা প্রয়োজন।
এদিকে রোববার রাতে বিএমডি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সারা দেশেই ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজারহাটে ১০১ মিলিমিটার। একই সময়ে ঢাকায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জুলাই মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, মধ্য আষাঢ় থেকে শ্রাবণের প্রথম দুই সপ্তাহে বা ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি খুবই কম হয়েছে। এই মাসে ৫০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে ২৫০ দিন। এটা ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ কম।
এখানেই শেষ নয়, জুলাই মাসে ৩১ দিনের মধ্যে ২৬ দিন বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে মাত্র ১২ দিন। এখন দেখার অপেক্ষা চলতি বৃষ্টিপাতের ঘটনা আগস্টের স্বাভাবিক পরিমাণের লক্ষ্য পূরণ করে কিনা। যদিও বিএমডি মাসব্যাপী পূর্বাভাসে বলেছে, আগস্টে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে।