Logo
Logo
×

জাতীয়

দাবি আদায়ে অনড়

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে গণমত তৈরি করছেন শিক্ষকরা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১০:৩৭ পিএম

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে গণমত তৈরি করছেন শিক্ষকরা

শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থানরত শিক্ষকদের কর্মসূচি অব্যাহত আছে। গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের কারণে কিছু শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছেন। 

এ কারণে রোববার উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা যায়। তবে যারা ফিরে গেছেন, তারা স্কুলে উপস্থিত থাকলেও ক্লাস নেননি। শুধু তাই নয়, নিজ প্রতিষ্ঠানে তারা গণমত তৈরিতে কাজ করছেন। এর অংশ হিসাবে ছাত্র-অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছেন। দাবি আদায় হলে শিক্ষার্থীরা কম টাকায় পড়ালেখা করতে পারবে-সেই তথ্য জানাচ্ছেন শিক্ষকরা। 

১৭ জুলাই কর্মসূচিস্থলে পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করেছিল। ওই ঘটনায় সামান্য আহত নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একেজি ছায়দুল হক আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অহিদ আহম্মদ ২১ জুলাই রাতে মারা গেছেন।

এদিকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এর অংশ হিসাবে শনিবার রাতে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপাসহ শিক্ষা উপকমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখন শিক্ষকদেরকে কর্মসূচি ‘স্থগিত’ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। 

তবে শিক্ষক নেতারা জবাবে বলেছেন, দাবি বিবেচনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিক্ষকদের আশ্বস্ত করা হলে তারা ফিরে যেতে পারেন।

জানতে চাইলে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. কাওছার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আলোচনায় তাদেরকে কর্মসূচি স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করা হয়। তবে তারা কর্মসূচিস্থলে গিয়ে দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আশ্বাস দেওয়ার পাল্টা অনুরোধ করেছেন, যাতে শিক্ষকরা আশ্বস্ত হতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত তারা এ ব্যাপারে কোনো ‘আপডেট’ (পরবর্তী বার্তা) জানাননি। 

তিনি আরও বলেন, ১৭ জুলাই অনুষ্ঠানস্থলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। সেদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের শিক্ষক অহিদ আহম্মদ কিছুটা আহত হয়েছিলেন। পিঠে ব্যথা পাওয়ায় তিনি অসুস্থ বোধ করছিলেন। পাশাপাশি তার প্রেসার বেড়ে যায়। তখন তিনি বাড়ি চলে যান। এরপর ২১ জুলাই রাতে তিনি মারা যান। এটা আমাদের জন্য একটি দুঃখজনক ঘটনা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর ৬ মাস। আর ৬ মাস চাকরি ছিল তার। শিক্ষা জাতীয়করণ হলে হয়তো তিনি এর সুফলও পেতেন না। কিন্তু এর গুরুত্ব বিবেচনা করে তিনি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, ১১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান করছেন শিক্ষকরা। আন্দোলন তীব্র করতে ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি দেন। সে অনুযায়ী ১৬ জুলাই স্কুলে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকদের অংশ বাড়ানো হয়। শুরু থেকে কর্মসূচিতে সহায়তা করছিল পুলিশ। কিন্তু পরদিন ১৭ জুলাই পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে। শিক্ষক নেতাদের দাবি, সেদিন শতাধিক শিক্ষক আহত হন।

এদিকে রোববার দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ছুটি গত সপ্তাহে বাতিল করা হয়। এছাড়া ১৮ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকাসহ ৫ দফা নির্দেশনা দেয়। 

শিক্ষক নেতারা মনে করছেন, এ দুটি পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে আন্দোলন ভন্ডুল করতে। তাই তারা কর্মসূচি বাতিল না করে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে শনিবার রাতে কিছু শিক্ষক কর্মস্থলে ফিরে যান। 

আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক শেখ কাওছার যুগান্তরকে বলেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়। তখনও গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করা হয়নি। সুতরাং, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা তাদের আন্দোলন বানচালের অপচেষ্টা মাত্র। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলন আরও চাঙা হয়েছে। যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছেন, তারা দেখাচ্ছেন যে স্কুল খোলা আছে। কিন্তু ক্লাস নিচ্ছেন না। 

এদিকে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সরেজমিন দেখা যায়, ১৩ দিনের মতো শিক্ষকরা প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা দখল করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। প্রতিদিনের মতো শিক্ষকরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বক্তব্য, স্লোগান, গান-কবিতা পরিবেশন করছেন। তীব্র গরমের কারণে শিক্ষকদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তা দখল করে রাখায় এ সড়ক দিয়ে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। ফলে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম