ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৩, ১০:২০ পিএম
অবশেষে আন্দোলনের সপ্তম দিনে ঘুম ভেঙেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থানরত শিক্ষকদের সঙ্গে সোমবার শেষ বিকালে বৈঠক হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তারা শিক্ষকদের রাজপথ ছেড়ে ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তবে রাতে শিক্ষকরা আন্দোলন ও আলোচনা একসঙ্গে চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
১১ জুলাই থেকে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। সরকারের তরফে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এ সময় ১৬ জুলাই থেকে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষকদের ঢাকা এনে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সে অনুযায়ী রোববার থেকে সারা দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে প্রেস ক্লাবের সামনে জোরালো অবস্থান কর্মসূচি চলছে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজেও তারা অনড় আছেন কর্মসূচিস্থলে।
শিক্ষক নেতারা জানান, ১১জুলাই কর্মসূচি শুরুর পর প্রথমে পুলিশ বাধা দিয়েছিল। পরে ১৬জুলাই পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতা পেয়েছিলেন তারা। কিন্তু সোমবার বেলা দেড়টার দিকে কিছু পুলিশ সদস্য আকস্মিকভাবে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হন। এ সময় লাঠিপেটাও করা হয় বলে জানান বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানীর সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ।
তিনি যুগান্তরকে বলেন,ওই সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মূলত তাদের খুশি করতেই পুলিশ সদস্যরা এই হামলা করেছে। এতে শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে তার দাবি। যদিও তিনি আহতদের নাম জানাতে পারেননি।
বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা তাদের দাবি-দাওয়া জানিয়ে গেছেন। আমরা তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন মহলে পৌঁছানোর আশ্বাস দিয়েছি। পাশাপাশি তাদেরকে ক্লাসরুমে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছি। কেননা, করোনা পরিস্থিতিতে দুবছরে অনেক শিখনঘাটতি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এভাবে জিম্মি করে দাবি আদায়ের পন্থা বেছে নেওয়া অনৈতিক। তাদের দাবি যৌক্তিক হতে পারে। আলোচনাও শুরু হয়েছে। আলোচনার পথেই সমাধান সম্ভব বলে মনে করি আমি। আমরা আমাদের কথা বলেছি। এখন বল শিক্ষক নেতাদের কোর্টে। তাদের জবাব শুনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে,শিক্ষকদের পক্ষে ৫ জন প্রতিনিধি আলোচনায় যোগ দেন। বৈঠকটি বসে পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীর দপ্তরে। আলোচনা চলাকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান ফোন করেন মহাপরিচালককে। এ সময় তিনি শিক্ষক নেতাদের জানান, শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি শিক্ষকদের দাবির ব্যাপারে অবগত ও সচেতন। তিনি শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বসবেন। তাই তাদের ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
জানা গেছে, শিক্ষক নেতারা সংগঠনের বৈঠকে আলোচনা শেষে সমাবেশস্থলে ফিরে যান। তারা বৈঠকের সারাংশ শোনান। কিন্তু শিক্ষকরা দাবি আদায় ছাড়া ফিরে না যাওয়ার ব্যাপারে জানিয়ে দেন শিক্ষক নেতাদের।
সন্ধ্যার পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৈঠকে বসেন সমিতির নেতারা। সেখানেও আলোচনা এবং আন্দোলন একসঙ্গে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ। তিনি বলেন, খালি হাতে শিক্ষকরা ফিরে যাবেন না।