বিএসএমএমইউর অনিয়ম খতিয়ে দেখা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৩, ০৮:৩৩ পিএম
ছবি: যুগান্তর
গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়মের যেসব অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়োগ কার্যক্রমসহ নানা অভিযোগই আমাদের কানে এসেছে। এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে আমরা খতিয়ে দেখব।’
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাসপাতালটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এ হাসপাতালের গুরুতর এসব অনিয়ম আমরা হতে দিতে পারি না। হাসপাতালটির নিয়োগ, ক্রয়-বিক্রয়সহ যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো তারা নিজেরাই নিয়ে থাকে। আমাদের সংশ্লিষ্টতা খুব বেশি থাকে না। কিন্তু হাসপাতালটিতে সরকার অর্থায়ন করে থাকে। সে হিসেবে আমরা অবশ্যই অনিয়মের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব। আমরা চাই না হাসপাতালটিতে আসা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা যেন ব্যাহত না হয়।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা। এমনকি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি ১৩০০ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে। যদিও নিয়োগ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে, বড় একটি নিয়োগ কিন্তু সামনে আছে। সেই নিয়োগের কমিটিতে উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ নেই। একটি শক্তিশালী কমিটি করেই সেই নিয়োগ কার্যক্রমটি সম্পন্ন করা হবে।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণে অনিয়মের আশ্রয়, যোগ্যতার ঘাটতি নিয়ে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি লাভ, পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ, অনৈতিক উপায়ে অর্থ উত্তোলন, দরপত্রে অনিয়মের মতো বিস্তর অভিযোগ উঠেছে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে।
২১ মে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কোনো নিকটাত্মীয় পরীক্ষার্থী হলে প্রতিষ্ঠানের কোনো অধ্যাপক, শিক্ষক অথবা কর্মকর্তা ওই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকতে পারেন না। কিন্তু শারফুদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে তানভীর আহমেদ ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর স্নাতকোত্তর (এমডি/এমএস) কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ওই পরীক্ষার সার্বিক তত্ত্বাবধান কমিটির প্রধান ছিলেন উপাচার্য নিজে। তানভীর আহমেদ এখন বিএসএমএমইউর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি অটোল্যারিংগোলজি বিভাগে কনসালট্যান্ট পদে আছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, উপাচার্যের এমন অন্তত ১১ আত্মীয় চাকরি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। দুদকে অভিযোগে বলা হয়, যত নিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর সামান্যই বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
এ সময় দেশে ডেঙ্গির প্রার্দুভাব প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ কিছুটা বাড়ছে। তবে রোগী বাড়লেও চিকিৎসার বিষয়ে আমরা প্রস্তুত। হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করে রাখা আছে। তাছাড়া ডেঙ্গিতে আমরা চিকিৎসার বিষয়টি দেখি। মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রণের কাজগুলো করে থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন। কোথায় মশা বাড়ছে, কোথায় রোগীর সংখ্যা বেশি, এই তথ্যগুলো তাদের দিয়ে থাকি। যতটুকু জেনেছি শক্তিশালী স্প্রে আনা হয়েছে। আমরা আশা করি যদি মশা নিধন হয়, ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যাও কমে যাবে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গি চিকিৎসায় কর্নার করেছি, চিকিৎসক নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, একসঙ্গে যা ওষুধ লাগে সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। কাজেই সেখানে আমি মনে করি কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি আরও বলেন, ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে শুরুতে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হলেও বর্তমানে সেখানে কিছু ডেঙ্গি রোগী ভর্তি আছে এবং চিকিৎসা নিচ্ছে। যেহেতু ডেঙ্গি সংক্রমণও এখন কম, ডিএনসিসি চাইলে হাসপাতালটি আবার তাদের কাছে হস্তান্তর করতে পারি।
স্বাস্থ্যসেবায় বিভিন্ন নতুন উদ্যোগ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা কোভিডকালীন টেলিমেডিসিন ব্যবহার করেছি, এখন সেটিকে ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে আসা প্রয়োজন। পুরো হেলথ সেক্টরকে ডিজিটালাইজড করা হবে। এরই মধ্যে ১৫০০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট ডিপিইতে পাশ হয়েছে। এই সিস্টেমে প্রত্যেকের জন্য একটি হেলথ কার্ড থাকবে। যেকোনো জায়গায় সেই কার্ড নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবে। তার রোগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য কার্ডে সংরক্ষণ থাকবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। এ সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।