ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন র্যাবের, মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেফতার
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৪৬ পিএম
ইজিবাইক চালক শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা, কারওয়ানবাজারে র্যাবের কার্যালয়ে।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় আলোচিত ইজিবাইক চালক শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাব। সেইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ চক্রের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সাবির্ক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরনের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণ ও হত্যাসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের গ্রেফতারে র্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারি ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র্যাব ইতোমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকার কদমতলী থানাধীন মদিনাবাগ এলাকায় বসবাসকারী শাহাদাত হাওলাদার (৩০) নামক একজন ইজিবাইক চালক ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকাস্থ একটি গ্যারেজ থেকে ভাড়া করে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। গত ২৩ এপ্রিল আনুমানিক বিকাল ৪ ঘটিকায় প্রতিদিনের ন্যায় সে উক্ত গ্যারেজ থেকে ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহন করার জন্য বের হয়। ওই দিন রাতে শাহাদাত প্রতিদিনের ন্যায় বাসায় না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পায়। এতে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে ও তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে।
পরদিন ২৪ এপ্রিল সকাল আনুমানিক ৯টা ৪৫ মিনিটে শাহাদাতের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি জানায়, মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানাদীন কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভার ব্রিজের নিচে একটি লাশ পড়ে আছে। সংবাদ পেয়ে শাহাদাতের পরিবারের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে শাহাদাতের মাথা, মুখ ও কপালে জখম অবস্থায় মরদেহ দেখতে পায়। ঘটনার সংবাদ পেয়ে সিরাজদিখান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শাহাদাতের মৃতদেহ উদ্ধারপূর্বক সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
উক্ত ঘটনার পর মৃতের ভাই শহিদুল ইসলাম জসিম (৪০) তার পরিবারের সাথে পরামর্শ করে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাতনামা ২/৩ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দস্যুতাসহ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর- ২৮, তাং- ২৪/০৪/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩৯৪/৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
হত্যাকাণ্ডটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল আলোচিত ও ক্লুলেস ইজিবাইক চালক শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল ঘটনাস্থলের আশপাশ পরিদর্শন করে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য ও গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তায় উক্ত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। এর পর গতকাল শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জসহ ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মো. জুয়েল বেপারী (২৭) এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত মো. সাজ্জাদ শেখ (২৩), মো. ইসমাইল হোসেন (২৩), মো. লিমন মাতুব্বর (২১), মো. সোহাগ (২০) ও রোমান শিকদারকে (১৮) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের নিকট ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, উক্ত ইজিবাইকটি মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানে বসবাসরত মো. জাকির হোসেনের নিকট বিক্রি করে দিয়েছে। আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে, র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল আজ শনিবার ভোররাতে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে মো. জাকিরকে (৪০) গ্রেফতার করে। জাকিরের দেয়া তথ্য মতে জাকিরের গ্যারেজ হতে ছিনতাইকৃত ইজিবাইকটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়াও উক্ত গ্যারেজ হতে বিভিন্ন সময়ে আসামিদের ছিনতাই করা আরও ৫টি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন জুয়েল, সাজ্জাদ, লিমন, রোমান, ইসলাইল ও সোহাগ মিলে মাওয়া ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘণ্টায় ৩২০ টাকা হিসেবে ভিকটিম শাহাদাতের ইজিবাইকটি ভাড়া করে। বেড়ানোর সময় তারা ইজিবাইকটি ছিনতাই করবে বলে পবিকল্পনা করে। কিন্তু ঈদের দিন বিধায় সেই দিন না করে পরবর্তী দিন উক্ত ইজিবাইকটি ছিনতাই করবে বলে পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভিকটিমকে ঈদের দিন ১ হাজার ৯০০ টাকা ভাড়া দেয়। পরের দিনও তারা ঘুরতে যাবে বলে জুয়েল ভিকটিমের মোবাইল নম্বরটি সংরক্ষণ করে রাখে। পরের দিন (২৩ এপ্রিল) বিকাল আনুমানিক ৫ ঘটিকায় তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম শাহাদাতকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কল করে কদমতলী লাবনী রেস্টুরেন্টের সামনে ডেকে আনে। সেখান থেকে জুয়েল, সাজ্জাদ ও লিমন ইজিবাইকে উঠে এবং কিছুক্ষণ পর ইসমাইলকে ফোন দিয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন কালীগঞ্জ খালপাড় অবস্থান করতে বলে। কালীগঞ্জ এলাকা হতে ইসমাইলকে সাথে নিয়ে তারা মাওয়ার উদ্দেশে রওনা করে।
অতঃপর তারা শ্রীনগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। ঘোরাফেরা শেষে ফেরার পথে আনুমানিক রাত ১১ ঘটিকায় সিরাজদিখান থানাধীন কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভার ব্রিজের উপরে এসে ইজিবাইক থামিয়ে গল্প করতে থাকে। তার কিছুক্ষণ পর তারা আশপাশে কোনো লোকজন দেখতে না পেয়ে জুয়েল, সাজ্জাদ, ইসমাইল ও লিমন ভিকটিম শাহাদাতের মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারি কিলঘুষি মারতে থাকে। এতে ভিকটিম ডাক-চিৎকার করলে জুয়েল ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ভিকটিম শাহাদাতকে উক্ত ব্রিজ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।