মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেলেন ১৩৮ জন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৩, ১০:৩০ পিএম
১০ বছর আগে মোছা. মাহমুদা খানমের ট্রাকচালক বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশ বড় বোন মোর্শেদা খানমের সহযোগিতায় চলে তাদের নয় সদস্যের পরিবার। বড় বোনকে দেখে ছোটবেলা থেকেই পুলিশ হওয়ার ইচ্ছে ছিল মাহমুদা খানমের।
গত বছর পুলিশের মাঠে দাঁড়িয়ে ওজনের কারণে প্রথম দিনই বাদ পড়েন। এ বছর সরকারি ফি মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মাহমুদা।
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের মেয়ে মাহমুদা খানম (১৯)। তিনি সাত বোনের মধ্যে পঞ্চম।
শুধু মাহমুদা খানম নয়, তার মতো ঘুস ও স্বজনপ্রীতি ছাড়া মাত্র ১২০ টাকা সরকারি ফি দিয়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন ১৩৮ জন।
নতুন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুস ও স্বজনপ্রীতির প্রয়োজন হয়নি। আবেদনকারীরা তাদের যোগ্যতা বলে চাকরি পেয়েছেন।
বুধবার গভীর রাতে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন গ্রিলশেডে প্রার্থীদের যাচাই বাছাই শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। সবার হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ও মিষ্টি মুখ করান পুলিশ সুপার।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, কনস্টেবল নিয়োগ পাওয়ার জন্য জেলায় ৪৭০৬ জন চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৯৩২ জন, উত্তীর্ণ হন ২০১ জন। মেধার ভিত্তিতে ১৩৮ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে ১৬ জন নারী রয়েছেন, বাকি ১২২ জন পুরুষ। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কৃষক, দিনমজুরসহ হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রয়েছে।
গোপালপুরের হাদিরা গ্রামের আফরোজা আক্তার বলেন, ১৪ মাস আগে আমার বাবা মারা যান। বোন জামাইয়ের সহযোগিতায় আমাদের পরিবার চলতো। একটি চাকরির জন্য ছয় মাস আগে সেনাবাহিনীর মাঠে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রাথমিক মেডিকেলে বাদ পড়ি। পরিবারের হাল ধরতে আমার একটি চাকরির খুব প্রয়োজন ছিলো। বর্তমান সময়ে বিনাপয়সায় পুলিশে চাকরি পাবো তা কল্পনাও করিনি। চাকরি পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। আমার বাবা থাকলে আরো বেশি খুশি হতেন।
দেলদুয়ার উপজেলার নাল্লাপাড়া গ্রামের রুপা আক্তার বলেন, আমার কৃষক বাবা ৫ বছর ধরে অসুস্থ। আমার চাকরিটি খুব দরকার ছিলো। আমি ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছি। কল্পনাই করতে পারিনি যে ১২০ টাকায় চাকরি পাবো। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
গোপালপুরের নগদা শিমলা ইউনিয়নের উজ্জল মিয়া বলেন, আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি দুই বছর অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করেছি। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। পুলিশের এ চাকরি আমার খুব দরকার ছিলো। আমি খুবই আনন্দিত।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে আইজিপির উদ্যোগে সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই তারা প্রাথমিকভাবে চাকরিতে উর্ত্তীণ হয়েছে।
আরও বলেন, সরকার সহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই টাঙ্গাইল পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই। পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ সব সময়ই জনণের স্বার্থে কাজ করে।