এসপির নামে টাকা হাতিয়ে ফাঁসলেন আ.লীগ নেতা
মুহাম্মদ আবুল কাশেম, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৩, ১০:৩২ পিএম
অভিযুক্ত হাসান আলী। ফাইল ছবি
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং ঈদগাঁও থানার ওসির নাম ভাঙিয়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে হাসান আলী নামের এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঈদগাঁও থানায় মামলাটি করেন একই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বাঁশকাটা এলাকার মৃত খুইল্যা মিয়ার ছেলে মো. ছৈয়দ আলম।
অভিযুক্ত হাসান আলী ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ধর্মের ছড়া এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে এবং সদ্যবিলুপ্ত ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। হাসান আলিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ঈদগাঁও থানার ওসি মো. গোলাম কবির।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোমাতলী মৌজায় হাফেজের ঘোনা নামে ২৪০ একরের একটি চিংড়ি ঘের রয়েছে। এই ঘের নিয়ে নাপিতখালি মৌজার কৈলাশের ঘোনা নামক অপর একটি চিংড়ি ঘেরের লোকজনের খাল দখল-বেদখল ইস্যুতে বিরোধ চলছিল। এসব সমস্যা নিয়ে একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আলম ও আওয়ামী লীগ নেতা হিসাবে হাসান আলী এলাকায় সালিশ-বিচার করে থাকেন। ওই সময় উপস্থিত বিচার প্রার্থীদের সামনে সালিশ না মানলে থানার ওসির বন্ধু পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন এবং মামলা করার হুমকি দেন। ঘের কমিটির সদস্যরা সমস্যাটি সমাধানের লক্ষ্যে হাসান আলীর দ্বারস্থ হন।
এ সময় খালটি পুনরুদ্ধার করে দেওয়ার কথা হাসান আলীকে জানালে, হাসান আলী ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিলে সমস্যাটি সমাধান করা যাবে বলে আশ্বস্ত করেন। তার প্রতি আস্থা এনে ঘের কমিটির সদস্যরা ২ জানুয়ারি প্রথম দফায় ৩৫ হাজার, পরদিন ১ লাখ, ৫ জানুয়ারি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দেন। ওই সময় আসামি হাসান আলী পুলিশ সুপারকে এক লাখ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ১ লাখ এবং ওসিকে ১ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। পরে জানতে পারেন প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ আছে, হাসান আলী ছাত্র জীবনে চট্টগ্রামে পড়াশোনা করার সময় একটি কলেজে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মতো সংগঠনের বায়তুল মাল সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময়ে শিবিরের প্রভাব বিস্তার করে বন বিভাগের জমি দখল, সার ও বার্মিজ লবণ পাচার, বন কর্মকর্তাদের রাইফেল ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন এই হাসান আলী। তৎকালীন তার বিরুদ্ধে সার পাচারের মামলাও হয়েছিল। যদিও বছর তিনেক আগে বড় ভাই প্রয়াত মনজুর আলমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন হাসান আলি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, হাসান আলীর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তার আপন ভাতিজা, চাচাতো ভাইসহ অন্তত পরিবারের ১০ সদস্যের নামে মাদক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসায়ীদের ‘শেল্টার’ দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, পুলিশের নাম ভাঙিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পেছনে হাসান আলীসহ যেই জড়িত থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাসান আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।