Logo
Logo
×

জাতীয়

যেসব কৌশলে প্রবাসীদের সর্বস্বান্ত করে ছিনতাইকারীরা, বাঁচার উপায় 

Icon

মানিক রাইহান বাপ্পী

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম

যেসব কৌশলে প্রবাসীদের সর্বস্বান্ত করে ছিনতাইকারীরা, বাঁচার উপায় 

পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশে পা রাখেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। সঙ্গে নিয়ে আসেন পরিবারের জন্য মূল্যবান জিনিস। আর সেগুলো হাতিয়ে নিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে ছিনতাইকারীরা।

কখনো ট্রান্সপোর্ট সহযোগিতার নামে আড়ালে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি বা চোখে-মুখে মলম লাগায়, আবার কখনো বন্ধুসুলভ সখ্যতা গড়ে তুলে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে সঙ্গে থাকা সব মালামাল লুটে নেয় তারা। এতে সর্বস্বান্ত হন প্রবাসীরা। শুধু তাই নয়, অজ্ঞান করে ফেলে দেওয়া হয় ব্রিজের নিচে, ঝোপ-জঙ্গলে। 

সম্প্রতি ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন মন্নান নামে এক ব্যক্তি। এই সৌদি প্রবাসী অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়েছে।  শুধু পাসপোর্ট ও একটি নোটপ্যাড ফেরত দিয়ে তাকে ফেলে রেখে গেছে।

বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সানু মঙ্গল জানান, শুক্রবার সকালে রেলওয়ে গেটের সামনে ওই প্রবাসীকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন কিছু যাত্রী। তার সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট দেখে পরিচয় নিশ্চিত হই। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি ঢামেকে ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। 

তিনি জানান, ধারণা করা হচ্ছে বিমানবন্দরে নামার পর মন্নানের সঙ্গে অপরিচিত মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে দেয়। এর ফলে কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার সঙ্গে থাকা সবকিছু নিয়ে উধাও হয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। 

বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল আজমীর জানান, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা প্রবাসীদের প্রধান টার্গেট করে। কারণ তাদের কাছে টাকা ও দামি জিনিস থাকে। এগুলো হাতিয়ে নেওয়ার জন্য গুরুতর জখম ও হত্যা করতেও তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। তাই প্রবাসীরা দেশে আসলে আত্মীয়স্বজনের উচিত তাদের সঙ্গে বাড়ি নিয়ে যাওয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী জানান, প্রবাসী ওই লোকটি ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় কিছু লোকের সঙ্গে স্টেশনে গল্পও করছিলেন। পরে বাইরে হোটেলে খেতে যান একসঙ্গে। খাওয়ার পরপরই অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সঙ্গে থাকা সব কিছু নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। স্টেশনের বাইরে যাওয়ার পরই অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা তাকে কিছু খাইয়ে দিয়েছে বলে ধারণা করেন তিনি। 

মন্নান আলী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার জাম্বুরাচোরা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি ২০২১ সালে সৌদিতে কাজের সন্ধানে পাড়ি দেন।  প্রথমবারের মতো দেশে ফিরেছিলেন। বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশে রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন বলে জানা গেছে। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য তারেক যুগান্তরকে জানিয়েছেন, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কাজের সন্ধানে সৌদি গিয়েছিলেন মন্নান। দেশে ফেরার পথে ঢাকায় ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন বলে শুনেছি।  তার দেশে আসার খবর শুনে পরিবারের সবার মুখে ছিল হাসি। এখন বইছে কান্নার রোল।  প্রতিটি প্রবাসীর আরও সচেতন হওয়া জরুরি। 

সৌদি প্রবাসী মন্নানের পার্সপোর্ট। ছবি যুগান্তরএসআই সানু মঙ্গল যুগান্তরকে আরও জানান, এ ধরনের ঘটনা বিমানবন্দর এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটে। তবে মামলা হয় কম। কারণ প্রবাসীরা এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যান। হয়রানি হবে বলে অনেকেই মামলা করতে চান না। মামলা হলেও আসামি অজ্ঞাত হওয়ায় অভিযুক্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তবে অজ্ঞান পার্টি থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে সচেতন হওয়া জরুরি।

ছিনতাইয়ে অজ্ঞান পার্টির কৌশল
২০১৯ সালে অজ্ঞান পার্টির কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে যাত্রীদের খপ্পরে ফেলার নানা কৌশল। সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সাধারণত রাজধানীর ব্যস্ততম স্টেশনে বেশি থাকে। এদের প্রধান টার্গেট সাধারণ যাত্রীরা। বিমান, বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে এ চক্রের সদস্যরা ছদ্মবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে ভাব জমিয়ে যে কোনো খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেয় চেতনানাশক। পরে যাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে সর্বস্ব লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা।

শুধু তাই নয়, এ চক্রের সদস্যরা অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী সেজে যানবাহনে ওঠে। এরপর টার্গেটকৃত এক বা একাধিক ব্যক্তিকে চেতনানাশক খাইয়ে অচেতন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। 

অজ্ঞান পার্টি থেকে বাঁচতে যা করবেন

কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে অজ্ঞান পার্টির খপ্পর থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। বিশেষ করে, আজকাল ডাবের ভেতরে সিরিঞ্জের মাধ্যমে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়। তাই কখন, কোথা থেকে তৃষ্ণা মিটাচ্ছেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারো হাতে রুমাল দেখলে সতর্ক হতে হবে। কারণ রুমালের মধ্যে ক্লোরোফর্ম মিশিয়ে নাকের কাছে ধরলেই যে কেউ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এর পাশাপাশি ফুটপাতে বা রাস্তার মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে কোনো খাবার গ্রহণ না করাই ভালো। এগুলো থেকে বিরত থাকলে অনেকটাই বড় ধরনের দুর্ভোগের কবল থেকে বাঁচা যেতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম