সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের ছুটি সংক্রান্ত আইন পাশ
সংসদ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২২ পিএম
প্রধান বিচারপতির অবসরোত্তর বিশেষ ভাতার বিধান ২০২১ সালের মে মাস থেকে কার্যকর করার বিধান রেখে ‘সুপ্রিমকোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন’ ২০২৩ বিল সোমবার জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। এর ফলে কোনো বিচারক অবসর গ্রহণকালে ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের সুবিধা প্রাপ্য হবেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ২১তম অধিবেশনে বিলটি সংসদের স্থিরকৃত আকারে সংসদে পাশ হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও অধিকাংশ সংশোধনী প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। তবে সংসদে তিনটি সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাশ করার প্রস্তাব করেন।
প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির দুই সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিলে একজন সাবেক প্রধান বিচাপতিকে সুবিধা দিতে বিলের ২৪ নম্বর ধারা ‘প্রধান বিচারপতির অবসরোত্তর বিশেষ ভাতার বিধানটি' ২০২১ সালের মে মাস থেকে কার্যকর করার বিধান যুক্ত করার বিষয়ে বারবার আপত্তি উত্থাপন করেন।
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আপত্তিটি আমলে নিয়ে বলেন, কোনো আইনকে বা আইনের ধারাকে ‘রেক্টোসপেক্টিভ ইফেক্ট’ দেওয়ার ক্ষমতা সংসদের রয়েছে। বিলের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির জীবদ্দশায় গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সাচিবিক সহায়তা অফিস-কাম- রেসিডেন্সের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতি মাসে ৭০ (সত্তর) হাজার টাকা অবসরোত্তর বিশেষ প্রাপ্য হইবেন। ‘সুপ্রিমকোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ রহিত করে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলায় বিলটি পুন:প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিলে অবসর গ্রহণকারী বিচারকদের জন্য উৎসব ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে মাসিক বেতনের সমহারে এবং অর্ধ গড় বেতনের ছুটিতে থাকাকালে মাসিক বেতনের অর্ধেক হারে ছুটিকালীন বেতন পাবেন। পূর্ণ গড় বেতনে প্রদত্ত ছুটি, অর্ধ গড় বেতনে প্রদত্ত ছুটির দ্বিগুণ হিসেবে গণনা করা হবে। তবে অর্ধ গড় বেতনে প্রাপ্য ছুটির হিসাব সংরক্ষিত থাকতে হবে। কোনো বিচারক তার মোট কর্মকালীন ছুটির শর্তানুযায়ী অর্ধ গড় বেতনে ৩৬ মাস ছুটি ভোগ করতে পারবেন। এছাড়া পূর্ণ গড় বেতনের ছুটি একালীন পাঁচ মাস এবং অন্য কোন ছুটি ১৬ মাসের অধিক হবে না। বিচারকদের পূর্ণ বৎসরের জন্য অতিরিক্তি পেনশন হিসেবে মাসিক সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫শ’ টাকা প্রদান করা হবে।
বিলে অবসরের পর বিচারকরা যে পরিমাণ গ্রস-পেনশন প্রাপ্য হবেন, তার অর্ধেক বাধ্যতামূলকভাবে সমপর্নের বিধান রাখা হয়েছে। কোন বিচারক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ করলে কোনো ছুটি মঞ্জুর করা হবে না। কোনো বিচারক অনভিপ্রেত কোনো আঘাতের দ্বারা আহত হয়ে কর্মে অক্ষম হলে বিশেষ অক্ষমতা ছুটি প্রাপ্য হবেন। এছাড়া কোনো বিচারক অনুমোদিত ছুটি বা অবকাশের অতিরিক্ত অনুপস্থিতিকালের জন্য কোনো বেতন প্রাপ্য হবেন না। ছুটি মঞ্জুরের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংরক্ষিত।
বিলে পেনশনের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, কমপক্ষে পাঁচ বছর পেনশনযোগ্য কর্মকাল সমাপ্তির পর বা অবসর গ্রহণের বয়সসীমা পৌঁছার আগে অসুস্থতাজনিত কারণে অবসরে গেলে বা অপসারিত হলে বা দশ বছর পেনশনযোগ্য কর্মকাল সমাপ্তির পর বা অবসর গ্রহণের বয়সসীমায় পৌঁছার আগে পদত্যাগ করলে বিচারকরা পেনশন সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত বিচারকদের জন্য নিজস্ব সার্ভিসের অনুমোদিত হিসেবে পেনশন প্রাপ্য হবেন। এছাড়া অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় স্থায়ী নিয়োগ পেলে অস্থায়ী কর্মকাল স্থায়ীকাল হিসেবে গণ্য হবে। মাসিক পেনশন সাকুল্যে সর্বশেষ উত্তোলিত বেতনের বেশি হতে পারবে না।
বিলে বিচারকদের আঘাতজনিত আনুতোষিক এবং পেনশন সুবিধা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সংবিধানের সপ্তম সংশোধন বাতিল ঘোষিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ৭নং আইন দ্বারা সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ কার্যকর রাখা হয়। অধ্যাদেশটির আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং পরিমার্জনক্রমে বাংলায় নতুন আইন আকারে ‘সুপ্রিমকোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন’ বিল ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে।