দেশে আংশিকভাবে দুর্ভিক্ষ চলছে: জিএম কাদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৪ পিএম
সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সরকারি হিসাবেই দেশের প্রায় ২৬ ভাগ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এই বিশাল অংশ ধার করে খাবার কিনছে। খাদ্যদ্রব্য তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
তিনি বলেন, ১ থেকে দেড় কোটি পরিবার বা ৪ কোটি মানুষ এমন বাস্তবতা মোকাবিলা করছেন। যারা পরিবারভুক্ত নন তারা এই হিসাবের বাইরে। তারা খাবার কিনতে বছরে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করছেন। ঋণ না করলে তারা খাবার পাচ্ছেন না। অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, পণ্যের অভাবে দুর্ভিক্ষ হয় না, দুর্ভিক্ষ হয় ক্রয় ক্ষমতার অভাবে। সরকারই স্বীকার করছে প্রায় ৪ কোটি মানুষের খাদ্য ক্রয় ক্ষমতা নেই। দেশ এখন আংশিকভাবে দুর্ভিক্ষ আক্রান্ত। দেশে আংশিকভাবে দুর্ভিক্ষ চলছে।
বুধবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জিএম কাদের একথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা ধার পরিশোধ করতে পারে, তাদেরই মানুষ ধার দেয়। প্রায় চার কোটি মানুষ খাদ্য কিনতে ধার করছেন। কিন্তু হতদরিদ্ররা তো কারও কাছে ধার পান না, তারা কী খেয়ে তিনবেলা পার করছেন? যারা কারও কাছে ধার পান না এমন অন্তত আরও ১০ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। সরকার বলে বেড়ায়, দেশে নাকি রুগ্ণ মানুষ দেখা যায় না। এটা কী সত্য কথা? আমাদের বেশিরভাগ মানুষ অর্থ কষ্টে আছেন। সরকার যদি না বোঝে দেশের মানুষ কষ্টে আছে তাহলে সমাধান হবে কিভাবে? মানুষ যখন মোটেও খাদ্য কিনতে পারবে না, না খেয়ে মারা যাবে- সে অবস্থা এখনো আসেনি। তবে, সেদিকেই তো দেশ যাচ্ছে।
জিএম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সব কাজ জনগণের স্বার্থে করেছিলেন। জনগণও সব সময় পল্লীবন্ধুকে নন্দিত করে রেখেছিলেন। এরশাদকে দেখলে পঙ্গপালের মতো মানুষ ছুটে আসতেন। আমরা সঠিকভাবে রাজনীতি করে পল্লীবন্ধুর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। যেখানে অন্যায়, অবিচার, বিভেদ থাকবে না। এরশাদ সাহেব সুশাসন দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তার সময়ে সবাই আইনের মধ্যেই ছিলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। এরশাদের শাসনামলে বিরোধীদলীয় কর্মকাণ্ডে কোনো বাধা দেওয়া হতো না। নব্বই পরবর্তী যে কোনো সময়ের চেয়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের সময় বেশি গণতন্ত্র ভোগ করেছে দেশের মানুষ। ইতিহাস একদিন সাক্ষ্য দেবে। জাতীয় পার্টি যখন দেশ পরিচালনা করেছে, তখন বিরোধীদের ওপর কোনো অন্যায় হয়নি। আদালতে গেলেই সবাই ন্যায়বিচার পেয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান ছিল। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজনীতিতে শক্তিশালী হয়ে আমাদের দল নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এরশাদ কখনোই দলীয়করণ করেননি, তাই তার কোনো গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়নি।
জিএম কাদের বলেন, কোনো দল তাদের নীতি আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে টিকতে না পারলে সামনের দিকে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অস্বাভাবিক রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই স্বাভাবিক রাজনীতি চলতে দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। বিরোধী দলকে কাজ করতে দেওয়া সরকারেরই দায়িত্ব। তিনি বলেন, আমরা পল্লীবন্ধুর নির্দেশিত পথে চলে নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, যারা বলছেন জাতীয় পার্টি ভেঙে যাচ্ছে- তারা ভুল বলছেন। জাতীয় পার্টি ভেঙে যাচ্ছে না। রাজনীতি হচ্ছে একটি চলন্ত ট্রেনের মতো। চলার পথে কেউ নেমে যাবে আবার কেউ নতুন করে উঠবে, এভাবেই রাজনীতি চলছে। আমরা গুটি কয়েক লোক চলে গেলেও জাতীয় পার্টির ক্ষতি হবে না, জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে নিজস্ব গতিতে। জাতীয় পার্টিতে নতুন প্রজন্ম যোগ দেবে। আমরা তাদের সঙ্গে নিয়ে পল্লীবন্ধুর রাজনীতি এগিয়ে নেব।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজুর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সৈয়দ দিদার বখত।
উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম আব্দুল মান্নান, মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল, মোস্তফা আল মাহমুদ, শেরীফা কাদের, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, মো. জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মো. সামছুল হক, সম্পাদকমণ্ডলী এমএ রাজ্জাক খান প্রমুখ।
এর আগে সকালে কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৫তম জন্মদিনের কর্মসূচির সূচনা করেন দলটির নেতাকর্মীরা। পার্টির মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপির নেতৃত্বে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম, লিয়াকত হোসেন খোকা, জহিরুল আলম রুবেল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল হামিদ ভাসানী, বেলাল হোসেন প্রমুখ।
কেন্দ্রের পাশাপাশি জেলা, উপজেলাসহ স্থানীয় পর্যায়েও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয় পার্টি।
বিভিন্ন স্থানে এরশাদের জন্মবার্ষিকী পালন: দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিরোধীদলীয় নেতা প্রয়াত পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৫তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে বুধবার পার্টির পক্ষ থেকে আলোচনাসভা, দোয়া ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
রংপুর : রংপুর নগরীর দর্শনা পল্লীনিবাসে প্রয়াত ওই নেতার কবর জিয়ারত করেন দলটির নেতারা। পরে মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির আয়োজনে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল হয়। এতে পার্টির কো-চেয়ারম্যান, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলার সদস্য সচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় পার্টির সদস্য এবং মহানগরের সিনিয়র সহসভাপতি লোকমান হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : গৌরীপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শামছুজ্জামান জামাল। মুখ্য আলোচক ছিলেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর। সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হুদা লিটন। বক্তব্য দেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসিম, পৌর জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক অলি উল্লাহ প্রমুখ। আলোচনা শেষে এরশাদের বিদেহী আÍার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
চট্টগ্রাম : জাতীয় পার্টি চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে চকবাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে সাবেক ওই রাষ্ট্রপতির রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। উপস্থিত ছিলেন মহানগর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মাহমুদ কামাল, জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হাজী শওকত আকবর, মহানগর জাপার সহসভাপতি মো. সালামত আলী প্রমুখ।
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) : ঈশ্বরগঞ্জে এদিন উপজেলা জাতীয় পার্টির কর্যালয়ে উপজেলা জাপার সিনিয়র সহসভাপতি নূরুল ইসলাম খান সুরুজের সভাপতিত্বে আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দেন উপজেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি, সাবেক সম্পাদক ইসমাইল হুসেন তুষার, জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এএইচএম সারোয়ার, পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।