সালমা ইসলামের ১৫ দফা ইশতেহার
গ্যাস সংযোগ ও শিল্পকারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম

এলাকায় গ্যাস সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা এবং বেকার যুবকদের কর্মস্থানের প্রতিশ্র“তিসহ ১৫ দফা নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা-১ আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, লাঙ্গলের প্রার্থী এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার নবাবগঞ্জে নিজ নির্বাচনি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘উন্নয়নের জন্য চাই পরিবর্তন, উন্নয়ন হবে দৃশ্যমান, লক্ষ্য কর্মসংস্থান’ স্লোগান সংবলিত ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। এতে আধুনিক বাসযোগ্য দোহার-নবাবগঞ্জ গড়ার প্রতিশ্র“তিও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে বাঁধ মেরামত, বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ইছামতী নদীর দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, পাকা রস্তার দুই পাশে ড্রেনেজ নির্মাণসহ অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার ইশতেহারে স্থান পায়। এ সময় তিনি নবাবগঞ্জ-দোহারে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। ইশতেহার ঘোষণার সময় জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, এলাকার মানুষের ভালোবাসা ও তাদের ভোটে নির্বাচিত হলে ইশতেহারে ঘোষিত সব প্রতিশ্রুতি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের জন্য আমি কাজ করব, ইনশাআল্লাহ। আধুনিক বাসযোগ্য দোহার-নবাবগঞ্জ গড়ার স্বপ্ন রয়েছে আমার। এ অঞ্চলের প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। তাই দোহার-নবাবগঞ্জকে উত্তাল পদ্মার করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে চলমান কাজের অসমাপ্ত অংশে বাঁধ মেরামতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পদ্মার পারজুড়ে ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া ৫ লাখ ভোটারের গণদাবি অনুযায়ী বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগের বিষয়ে সরকারিভাবে বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ইছামতী নদীকে সচল করে দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জন্য দূষণমুক্ত প্রাকৃতিক ও মনোরম পরিবেশে বাসযোগ্য এলাকা নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। নবাবগঞ্জকে পৌরসভায় রূপান্তরিত করে আধুনিক জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য পাকা রাস্তার দুপাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করা হবে। নাগরিকদের সমস্যাগুলো নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে জবাবদিহিতা ও তদারকিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দোহার-নবাবগঞ্জের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ও স্মার্ট মানে গড়ে তোলা হবে। এর পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করে গড়ে তোলা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালানো হবে। মাদকের ছোবল থেকে যুবসমাজকে ফিরিয়ে আনতে কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্য-চিকিৎসা এবং উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার বিষয়টিও সালমা ইসলামের ইশতেহারে স্থান পায়।
তিনি বলেন, দোহার-নবাবগঞ্জের ৪১৫টি গ্রামের মাটির রাস্তা পাকাকরণ, পাকা রস্তাগুলো সংস্কার করে প্রশস্তকরণ, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ লাইনের ব্যবস্থা এবং সড়ক সংযোগ মোড়ে আলোকবাতির ব্যবস্থা করা হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সচল করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম তদারকি করতে স্থানীয় সচেতন শিক্ষিত ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে গ্রামের সাধারণ ও অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দোহার অংশে পদ্মার মোহনা পুরুলিয়া থেকে প্রবাহিত খালটি খননের মাধ্যমে দুই পাড় শাসন করে নবাবগঞ্জের ইছামতী নদীর সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে সারা বছর পানি প্রবাহ চলমান রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে। খালের পানি দ্বারা স্থানীয় কৃষকের সেচ প্রকল্প চালু রাখা হবে। নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রাম ও কৃষিজমি জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া মা ও শিশুর জীবনরক্ষায় দোহার-নবাবগঞ্জের ২৩টি ইউনিয়ন ও দোহার পৌরসভায় অবহেলিত এলাকা এবং মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুই উপজেলার প্রতিটা ইউনিয়নে সেলাই কেন্দ্র চালু করে নারীদের কর্মমুখী করে গড়ে তোলার জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ইশতেহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সালমা ইসলাম বলেন, নতুন ভোটার, শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণ-তরুণীদের জন্য সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের বিভিন্ন ব্যক্তি-করপোরেট প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিপুলসংখ্যক হিন্দু-খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের আবাসস্থল দোহার-নবাবগঞ্জের শান্তি-সম্প্রীতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সবার জন্য শান্তিময় পরিবেশ বাস্তবায়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত দোহার-নবাবগঞ্জ গড়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে সালমা ইসলাম বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে সামাজিক অবক্ষয় রোধে উঠতি বয়সি কিশোর ও যুবসমাজকে সামাজিক কাজ ও খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হবে। নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারীর কর্ম ও ক্ষমতায়নসহ সবক্ষেত্রে নারীর জীবনমান উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নবাবগঞ্জে ইছামতী নদীর নবাবগঞ্জ-যন্ত্রাইল ব্রিজ প্রশস্তকরণ ও কৈলাইলের শালিকা লঞ্চঘাটে প্রস্তাবিত ব্রিজ নির্মাণ ও শোল্লার কালিগঙ্গা নদীর ওপর পাতিলঝাঁপ দত্তখণ্ড প্রস্তাবিত ব্রিজের নির্মাণ বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দোহার-নবাবগঞ্জে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তাঁতি জনগোষ্ঠীর বসবাস। বিলুপ্তপ্রায় তাঁতশিল্পকে পুনরুদ্ধারে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বেকার তাঁতিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে বলে ঘোষণা দেন সালমা ইসলাম।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে ম্যান্ডেট পেলে অতীতের মতো সর্বোচ্চ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও মানবিক হৃদয় নিয়ে জনগণের সেবায় সচেষ্ট থাকব। একজন নারী হিসাবে দোহার-নবাবগঞ্জের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। পাকা রাস্তাঘাট নির্মাণ, মসজিদ-মন্দির উন্নয়নে কাজ করেছি। ক্ষমতা নয়, মমতা দিয়ে মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমার স্লোগান হচ্ছে ‘ক্ষমতা নয়, মমতা; লাঙ্গল আনবে সমতা।’
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে বিলুপ্তপ্রায় তাঁতশিল্প পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ প্রসঙ্গে সালমা ইসলাম বলেন, ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জ। আর কেরানীগঞ্জের পাশে নবাবগঞ্জ। কেরানীগঞ্জে গ্যাস এলেও নবাবগঞ্জে আসেনি। অথচ আধা ঘণ্টার দূরত্ব। এবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি- নির্বাচিত হলে আমার প্রথম কাজ হবে গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করা। গ্যাস সংযোগ এলে শুধু বাসাবাড়ির কাজেই আসবে না, এলাকায় শিল্পকারখানাও হবে। যমুনা গ্রুপের ৪২টি কারখানা থাকলেও শুধু গ্যাসের অভাবে এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি সেই স্বপ্নও আপনাদের পূরণ হবে। নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সালমা ইসলাম বলেন, যমুনা গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের স্বপ্ন ছিল নবাবগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবেন। এর জন্য সরকারের তরফ থেকেও সহযোগিতা চাইব। না পেলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেসরকারিভাবে দোহার-নবাবগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করব। লিখিত ইশতেহার প্রসঙ্গে বলেন, ১৫ বছর এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। এলাকার উন্নয়নে সবার পরামর্শ গ্রহণ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, দোহার-নবাবগঞ্জের মানুষ অতীতের কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আমাকে মূল্যায়ন করবেন।
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে সালমা ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমি শতভাগ সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও আমার নির্বাচনি ক্যাম্প ভেঙে দিতে চায়। কেন সেখানে ক্যাম্প করলাম, সে বিষয়ে বারবার জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে তারা সহায়তা করছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন কেমন হবে, গতবারের নির্বাচনের মতো হবে কি না, সেটা কীভাবে বলব। তবে সরকারপ্রধান কথা দিয়েছেন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। তাই নির্বাচনের আগের রাতে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।